মোঃ হারুন অর রশিদ, ডেমরা প্রতিনিধি: ডেমরায় গত সোমবার ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে এলাকাভেদে পর্যায়ক্রমে ৩০ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ যেন চরম আকার ধারণ করেছে। বিদ্যুৎতের এ দীর্ঘ লোডশেডিং ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে শিশু—বয়স্করাসহ সকলেই সীমাহীন কষ্টে পড়েছেন। পানির অভাবে ডেমরার বেশ কয়েকটি এলাকা যেন কারবালার ময়দানে পরিণত হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ এনওসিএস’র কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বরে ফোন রিসিভ করা হয়নি বরাবরের মতো। এছাড়াও অভিযোগকারীদের পরিচিত নম্বর দেখলে ফোন কেটে দেওয়ার অভিযোগতো রয়েছেই ওই কন্ট্রোল রুমের বিরুদ্ধে। কয়েকটি এলাকার ভুক্তভোগী অধিবাসীদের অভিযোগ, ঊর্ধতন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারি না থাকায় সিদ্ধিরগঞ্জ ডিপিডিসির গড়িমশি ও বেপরোয়া খামখেয়ালিপনা যেন ক্রমেই বাড়ছে। তবে সোমবার থেকে এ সমস্যায় পড়েছেন মাতুয়াইল ও সারুলিয়া ডিপিডিসর গ্রাহকরাও।
এদিকে ডেমরায় ৩০ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় পানির মোটর, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মোবাইল ও ইন্টারনেটসহ সকল প্রকার সেবা বন্ধ হয়ে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। মোটর চালিয়ে গভীর নলকূপ থেকে পানি না উঠাতে পেরে হাজারো পরিবারের রান্নাবান্না হয়নি। পাশাপাশি টয়লেট ও গোসলসহ নানা সমস্যায় পড়েছেন অধিবাসীরা।
অভিযোগ, প্রকট এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে ডেমরাবাসীরা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড’র (ডিপিডিসি) সিদ্ধিরগঞ্জ, সারুলিয়া ও মাতুয়াইল জোনের কন্ট্রোল রুমসহ নির্বাহী প্রকৌশলীর ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে সহযোগিতা চেয়েছেন। এক্ষেত্রে সিদ্ধিরগঞ্জ ডিপিডিসি, সারুলিয়া ও মাতুয়াইল ডিপিডিসি কন্ট্রোল রুমে ফোন করে গ্রাহকরা নানামুখি হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একেতো কন্ট্রোল রুমের ফোন রিসিভ করেনা কেউ, অন্যদিকে দু’একবার ফোন রিসিভ করে অভিযোগ লিখে রাখলেও যোগাযোগ করে দীর্ঘ সময় পাড় করে। আর এ আচরণ বেশি করেছে সিদ্ধিরগঞ্জ ডিপিডিসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
সরেজমিন এলাকাবাসীরা জানায়, ডেমরা থানা এলাকাটি ডিপিডিসির সিদ্ধরগঞ্জ, সারুলিয়া ও মাতুয়াইল জোনের আওতাভুক্ত। এর মধ্যে গত সোমবার ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে ঝোড়ো দমকা হাওয়াসহ প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাই সোমবার সকাল থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের বিষয়টি অধিবাসীরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছেন। তবে বিপত্তি ঘটেছে তার পরের সময় থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত। এদিকে মঙ্গলবার দুপুর পৌরস ১ টা পর্যন্ত ডেমরার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় পানির সমস্যায় এলাকা যেন কারবালার ময়দানে পরিণত হয়েছে।
আরও জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ ডিপিডিসির অন্তর্ভুক্ত শিমরাইল, শুকুরশী, বালুর ঘাট, সারুলিয়া এলাকা, সারুলিয়া ডিপিডিসির অন্তর্ভুক্ত হাজিনগর, টেংরা, বামৈল, বাঁশেরপুল, আমতলা এলাকা, মাতুয়াইল ডিপিডিসির অন্তর্ভুক্ত কোনাপাড়া, মাতুয়াইল, মুসলিমনগর, শান্তিবাগ, ফার্মের মোড় ও ডগাইর এলাকায় পর্যায়ক্রমে ৩০ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় অধিবাসীরা শেষ পর্যায়ে ক্ষোভে ফুসে উছেছেন। এদিকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ওইসব এলাকায় ঘন ঘন অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে সারুলিয়া এলাকা থেকে এবারের হজ্বযাত্রী হাজী মহাসিন মিয়া ও একাধিক অধিবাসী জানায়, গত সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার কারণে এলাকার অধিবাসীরা পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন। গৃহস্থালির রান্নাবান্নাসহ নানা কাজে বাইরে থেকে মিনারেল পানি কিনে জরুরী কাজ সারতে হয়েছে। আর সিদ্ধিরগঞ্জ ডিপিডিসিকে ফোন করলে তারা ফোন রিসিভ করেনা বলে জরুরী মুহুর্তে আমরা সেবা বঞ্চিত থাকি।
এ বিষয়ে বক্সনগর এলাকার অধিবাসী আলী আহম্মেদ, আবুল কালাম, ফার্মের মোড়ের হারুন অর রশিদসহ একাধিক এলাকাবাসী জানান, মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত এলাকার মসজিদগুলোতেও অজুর পানি ছিলনা দীর্ঘ লোডশেডিংয়ের কারণে। সর্বস্তরেই পানির হাহাকার ছিল। ফ্রিজের মাছ মাংসসহ নানা ধরনের খাবার নষ্ট হয়েছে। কলকারখানায় উৎপাদনও ব্যাহত হয়েছে। ভুক্তভোগী লাখো মানুষ ছিলেন বেকায়দায়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করেছে মঙ্গলবার ডিপিডিসির সেবা না পেয়ে।
এ বিষয়ে এনওসিএস, সিদ্ধিরগঞ্জ ডিপিডিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত অধিকারি বলেন, হাজারো অভিযোগকারী রয়েছে। আমরা কয়টা সমাধান করবো। আর কন্ট্রোল রুমে ফোন রিসিভ ও কেটে দেওয়ার বিষয়টি জটিলতা রয়েছে। অনেক অভিযোগ আসে বলে ফোন ব্যস্ত থাকে। আর পরিচিত নম্বর দেখে ফোন কেটে দেওয়া হয়না।