হাত-পা অচল, মুখ দিয়ে লিখে জিপিএ ৪.৫৮ পেলেন উজ্জ্বল

রংপুরের মিঠাপুকুরের মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেওয়া জুবায়ের হোসেন উজ্জ্বল নামে এক এইচএসসি পরিক্ষার্থী পাস করেছেন। তিনি জিপিএ ৪.৫৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
উজ্জ্বল উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের বালারহাট আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি পরীক্ষায় অংশ নেন। উজ্জ্বল উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের হযরতপুর গ্রামের হতদরিদ্র চাষি জাহিদ সারোয়ারের ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
এই আকাশ ছোঁয়ার আনন্দ প্রকাশেও ক্ষমতা নেই তার। তবু অনেক কষ্ট করে সে বলতে চাইল, আরও অনেক পড়াশোনা করতে চায় সে।
এর আগে যোবায়ের গ্রামে স্কুল থেকে ৪ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে এসএসসি পাশ করে। তবে স্কুল-কলেজে গিয়ে কখনই পড়েনি সে। তার পড়াশোনার সবটাই কম্পিউটার-ইন্টারনেটে।
প্রকৃতি তাকে শারীরিক কোনো সক্ষমতা না দিলেও তার কাছে লেখাপড়া, নামাজ-কোরআনের শিক্ষা পেয়েছে অনেকে। আশেপাশের অনেক ছেলে মেয়ে অকপটে জানাল সে কথা।
তিন সন্তানের বড় ছেলে আলাদা থাকে। সবার ছোট মেয়ে স্বামীর ঘরে। ছোট থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী মেঝ ছেলে যোবায়েরকে ছোটবেলা থেকে বয়ে নিয়ে বেড়ালেও বয়সের ভারে এখন আর পারেন না কৃষক বাবা জাহিদ সারোয়ার আর গৃহিনী মা উম্মে কুলসুম। তাই দুশ্চিন্তা ভর করেছে।
জাহিদ সারোয়ার বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলেটাকে পড়ানোর সঠিক সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম ছোটবেলা থেকে। কারণ একটা সময় আমরা না থাকলে তাকে কেউ আর বয়ে বেড়াবে না। লেখাপড়া শিখে একটা চাকরি জোটাতে পারলে কারো সহায়তা নিয়ে সে বেঁচে থাকতে পারবে।
প্রতিবন্ধী ছেলেটার পরীক্ষা পাশের আনন্দ বয়ে যাচ্ছে মা উম্মে কুলসুমের প্রাণে। বাকরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, কম্পিউটারে দারুণ পারদর্শী হলেও টাইপ করে লিখতে তার দারুণ কষ্ট হয়। যখন মুখে কাঠি নিয়ে লেখে, তার সারা মুখ লাল হয়ে যায়।
যে কোনও কারো সহায়তা নিয়ে অনলাইনে যে কোনো কাজ করতে পারবে যোবায়ের। তার জন্য শুধু সরকারি একটি চাকরির আকুতি তার বাবা ও মায়ের।