কেমন নেতৃত্ব চায় রাবি ছাত্রলীগ ?

মাহবুব বিল্লাহ, রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের ২৬ তম সম্মেলনে ১৮ সেপ্টেম্বর। সর্বশেষ, ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বরে এ ইউনিটের কমিটি হয়। যে কমিটি ছয় বছর বেশি সময় ধরে দায়িত্বে রয়েছে।
এর আগের বছর প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১২ নভেম্বর রাবি শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় কমিটি। ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার শেষ সময়। যেখানে ৯৪ জন প্রার্থী জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। কিন্তু নানা জল্পনা কল্পনা করেও সেবার সম্মেলন স্থগিত হয়। এবার পুনরায় চলতি মাসের ১৮ সেপ্টেম্বর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছে আওমীলীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এই সংগঠনটি।
এদিকে রাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে ক্লিন ইমেজধারী, সৎ, যোগ্য এবং নেতৃত্বদানে ক্ষমতাসম্পন্ন পদপ্রত্যাশীদের দায়িত্ব দেওয়া হবে, নাকি অর্থের বিনিময়ে নেতৃত্বে চলে আসবেন ড্রপআউট, অছাত্র, বিবাহিত, দুর্নীতিবাজ, ভর্তি বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য এবং চাঁদাবাজিতে জড়িতরা, সে নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।
এছাড়া বরাবরের মতো এবারও কি স্থানীয়রাই আসবেন দায়িত্বে? নাকি বাইরেরও কাউকে নিয়ে আসা হবে ক্যাম্পাসের সর্বত্রজুড়ে এটা নিয়েও চলছে আলোচনা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
সামনে রাবিতে নেতৃত্বে আসতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কিছু পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ নেতার নাম এরই মধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে ক্যাম্পাসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাবির নতুন নেতৃত্বে আসার দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, জাকিরুল ইসলাম (জ্যাক), মেজবাহুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার (ডন), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, উপধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদ দুর্জয়। এ ছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন আরও অনেকে।
তবে এসব পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপআউট, অছাত্র এবং অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই শাখায় সৎ, যোগ্য, দক্ষ, নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পন্ন এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে স্বোচ্চার থাকবেন এমন নেতৃত্ব চান পদ প্রত্যাশী এসব ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্থানীয় ও বাইরের যোগ্য পদপ্রত্যাশীদের সম্মিলিত নেতৃত্ব দেখতে চান তারা।
আলোচনায় থাকা বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও পদপ্রত্যাশী কাজী আমিনুল হক লিংকন বলেন, আমাদের মৌলিক চাওয়া যে নেতৃত্ব আসবে তাকে অবশ্যই আওয়ামী পরিবারের হতে হবে পাশাপাশি সামনের নির্বাচনকে ট্যাকেল দেওয়ার মতো যথেষ্ট ক্যাপাবল হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও সাহসী হবে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে যার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে যে লড়াই করবে সেরকম নেতৃত্বই আসুক।
পদপ্রত্যাশী মেজবাহুল ইসলাম বলেন, 'এই মুহুর্তে ক্যাম্পাসে যথেষ্ট প্রাণোচ্ছল এবং উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করতে শুরু করেছে। সাবেক এবং বর্তমান বিশাল একটি অংশ উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে কারা রাবি ছাত্রলীগের মূল নেতৃত্বে আসবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে ২০২৪ সালের শুরুতে। সেই জায়গা থেকে শুধুমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে রেখে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন আসনে পরিকল্পনা মাফিক মাননীয় দেশরত্ন শেখ হাসিনার উন্নয়নকে যে নেতৃত্ব দেশব্যাপী প্রচার করতে পারবে, নিজ নিজ আসনে প্রচার করতে পারবে এবং নিজ নিজ কর্মীদের ট্রেইন আপ করে যে কোন অপশক্তির অপতৎপরতাকে রুখে দেওয়ার মতো সুসংগঠিত, স্মার্ট নেতৃত্ব আসুক।
সহ-সভাপতি জাকিরুল ইসলাম জ্যাক বলেন, যোগ্য, মেধাবী এবং কর্মীবান্ধব নেতৃত্বই আসুক। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এবং উত্তরবঙ্গের আওয়ামী রাজনীতির বটবৃক্ষ জননেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের মতামতের ভিত্তিতে এমন নেতৃত্ব আসুক যে নেতৃত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে অধিক গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার (ডন) মনে করেন, ছাত্রলীগ হবে সাধারন শিক্ষার্থীদের ভরসার আশ্রয়স্থল। এবারের রাবি ছাত্রলীগে এমন নেতৃত্ত্ব বাছাই করতে হবে যারা ছাত্র সমাজের ন্যায্য দাবির প্রতি সোচ্চার হবেন। ন্যায্য দাবি আদায়ে রাবি ছাত্রলীগ সার্বক্ষনিক ছাত্রসমাজের পাশে থাকবে এমন নেতৃত্বই আসুক।
সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু প্রত্যাশা করেন, ২৬ তম সম্মেলনে এমন কেউ নেতৃত্বে আসুক যিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া আদায়ে পাশে থাকবে শিক্ষার্থীবান্ধব একটি ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে চেষ্টা করবে, সামনে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত এর নাশকতা এবং গুজব বিরোধী সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এমন নেতৃত্ব আসুক।
বতমান প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব, তিনিও আসন্ন কমিটির সভাপতি পদপ্রত্যাশী। তিনি বলেন,'দীর্ঘদিন পরে হলেও আমাদের বহুল প্রত্যাশিত ২৬তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এজন্য আমরা খুব আনন্দিত এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি চাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলনে কর্মী বান্ধব, নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং সাধারন শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাবে এরকম নেতৃত্ব আসুক।'
গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু দাবি করেন, যারা বিতর্ক মুক্ত প্রকৃত আদর্শিক ছাত্রনেতা হিসেবে সুপরিচিত এবং রাবি ছাত্রলীগ কে ঐক্যবদ্ধ সুগঠিত ও গতিশীল রাখতে পারবে এমন যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব চাই।
উপধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদ দুর্জয় বলেন, "প্রার্থীদের সঠিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে খোঁজখবর নিয়ে যারা মাঠে ছিলো যোগ্য এবং স্বচ্ছ পাশাপাশি টাকার জন্য না বরং দলের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করবে, যারা ক্যাম্পাসটাকে আগলে রাখবে এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কারণ হবে না এমন নেতৃত্ব আসুক।"
তিনি আরও বলেন, "অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখানে আসে বাইরের জেলাগুলো থেকে। সুতরাং নেতৃত্বে স্থানীয়দের গুরুত্ব না দিয়ে সমন্নয় করে নেতৃত্ব আসুক যারা ক্যাম্পাসটাকে বিক্রি করবে না বরং আগলে রাখবে।"
সার্বিক বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইউনিট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এখানে রাজনীতি করতে হয়। বিশেষ করে একসময় জামায়াত শিবিরের প্রভাব এখানে বিদ্যমান ছিলো এখন শিবিরমুক্ত সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় আছে সেদিক থেকে আমি বিশ্বাস করি যে আওয়ামী পরিবারের সন্তান এবং দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত আছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যার গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং সামনের নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারবে এরকম নেতৃত্ব আসবে।