পাহাড়তলীতে রেলওয়ের কোয়ার্টার বাণিজ্য, ৩১ কর্মচারীর কোয়ার্টার বাতিলের নির্দেশ
মাজহারুল ইসলাম রানা, চট্টগ্রাম নগর প্রতিনিধি: রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মরত কর্মচারীদের দখল বাণিজ্য অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আওতাধীন পাহাড়তলী ভেলুয়ার দিঘী সংলগ্ন প্রায় প্রতিটি কোয়ার্টারের আশপাশে রয়েছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা, কেউ আবার বাসা ভাড়া দিয়ে গড়ে তুলেছে গোডাউন যা পাহাড়তলী বাজারের ব্যবসায়ীদের নিকট ভাড়া দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
আর এই বাসা বাণিজ্য নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তদন্তে নামে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তদন্তে ৩১ রেল কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোয়ার্টার বাণিজ্যের সত্যতা পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। তদন্তে উঠে এসেছে বসবাসের জন্য কোয়ার্টার বরাদ্দ নিয়ে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে, সেই জের ধরে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক।
যেসকল কর্মচারীর বাসা বরাদ্দ বাতিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- ওয়েম্যান সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, ওয়েম্যান মো. মোস্তফা, অফিস সহকারী মো. আতিকুর রহমান, টিকেট চেকার শাহিন মোল্লা, আরএনবি হাবিলদার কৃষ্ণ পদ চক্রবর্তী, টিকিট কিপার তপন কান্তি ভট্টাচার্য্য, গেইট কিপার রফিকুল ইসলাম, কার্পেন্টার শেখ জুবায়ের আহম্মেদ ছিদ্দিক, পি.ম্যান রোকন উদ্দিন, ওয়েম্যান রবিউল হক, অফিস সহকারী মোস্তাফিজুর রহমান, এম রিডার মো. মোস্তফা, এলএম মো.আলী, বুকিং সহকারি আবু নাঈম মো. ইউসুপ, ফিটার শরিফুল আলম, ই/ফিটার- ২ আবদুস সাত্তার, অফিস সহকারী হ্যাপি আক্তার, ডেসপাস মো. আজিজুর রহমান, মিস্ত্রি-২ আবু সুফিয়ান, এএলএম-২ শফি উল্ল্যাহ চৌধুরী, এস/ফিটার মো. শহীদ উল্লাহ খান, এফসি মো. মকবুল হোসেন, পি. ম্যান রুহুল আমীন মজুমদার, ওয়েম্যান শাহাদাত হোসেন, পি.ম্যান মাহিন উদ্দিন, এলএম-২ মো. কামরুল ইসলাম, খালাসী রিপন কান্তি দত্ত (দীপক), হাবিলদার মো. জসিম উদ্দিন সরকার, ডাব্লিউআরবি শামসুল হুদা ও পোর্টার জিয়াউল আলম ঠাকুর।
রেলওয়ে স্টাফদের কোয়ার্টার বাণিজ্য ও লক্ষ লক্ষ টাকা আয়ের বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনে উল্লেখিত এলাকায় বরাদ্দকৃত রেলওয়ে বাসায় অবৈধভাবে সম্প্রসারণ এবং বহিরাগতদের কাছে ভাড়া প্রদানের তথ্য নেয়া শুরু করে রেল কর্তৃপক্ষ। খোঁজ নিয়ে পাহাড়তলী ষ্টেশন এলাকায় ৩১টি কোয়ার্টার পাওয়া যায়, যাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজে বসবাস করার পাশাপাশি ডিমের আড়ৎসহ অবৈধভাবে সম্প্রসারণ করে বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিয়ে আসছে। আবার কেউ কেউ নিজে বসবাস না করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে গুদাম হিসেবে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর উর্দ্ধতন উপ সহকারী প্রকৌশলী মো.আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে এসব কোয়ার্টারের বরাদ্দ বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. আবিদুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ভাড়া প্রদানকারীদের বরাদ্দাদেশ বাতিল এবং অবৈধ সম্প্রসারণকারীদের নিজ উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।