নড়াইলের হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দুর্নীতি অনিয়মের তদন্ত শুরু

রিন্টু মুন্সি, নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইলের কালিয়া উপজেলার হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ মাহমুদুল হক এর দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ও অর্থ আত্মসাতের তদন্ত শুরু হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের পরিচালক শেখ হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্তকারী দল গত বুধবার (৩০ নভেম্বর) সরেজমিনে কলেজে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। কলেজের জিবি’র সদস্য মোল্যা টিপু সুলতানসহ তিনজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট গত ১৯ জানুয়ারি লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।
অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১২ আগষ্ট হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক কলেজের এডহক কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। মেয়াদ উত্তীর্ণের পর আডাই বছরের অধিককাল ধরে তিনি বিধি বহির্ভূতভাবে উক্ত এডহক কমিটির সভা ডেকে রেজুলেশন করে অবৈধভাবে কলেজ পরিচালনা করেছেন। নিয়মানুযায়ী পরবর্তী কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীর বেতনভাতা উত্তোলনের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানের বিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রতিস্বাক্ষর করবেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিধিবহির্ভুতভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে কলেজের তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন করে বিভিন্নখাতে খরচ দেখিয়ে আত্মস্যাৎ করেছেন।
তিনি মেয়াদ উত্তীর্ণ এডহক কমিটির মাধ্যমে রেজুলেশন করে ফাইল কেবিনেট ক্রয়, রাস্তায় মাটির কাজ, টয়লেট নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু কর্ণার নির্মাণ ও ছবি ক্রয় বাবদ কম্পিউটারে ভূয়া ভাউচার তৈরি করে লক্ষাধিক টাকা আত্মস্যাৎ করেছেন। করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালে কৃষিশিক্ষা বিষয়ে অনলাইন ক্লাশ না করলেও তিনি জীববিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক সামছুর রহমানকে স্বজনপ্রীতির কারণে ২৭ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। কলেজের শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালু না করায় কয়েক লক্ষাধিক টাকার সরকারি প্রজেক্টর ও কম্পিউটারগুলো অচল হয়ে যাওয়ায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। মেয়াদ ঊত্তীর্ণ এডহক কমিটির মাধ্যমে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা কলেজের তহবিল থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় যশোর শিক্ষা বোর্ড উক্ত কলেজের অনুকুলে তিন লক্ষ ঊনিশ হাজার টাকা ফেরত দেয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরতকৃত উল্লেখিত টাকা কলেজের ক্যাশ বহি বা কলামন বহিতে লিপিবদ্ধ না করে ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে বিভিন্নখাতে খরচ দেখিয়ে নিজে পকেটস্থ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্তকারী দল সরেজমিন তদন্ত আসেন। যশোর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক নিয়মিত গভার্ণিং বডি গঠনের নিমিত্তে গত ৩১ মে থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পুনরায় নতুন এডহক কমিটির অনুমোদন দেন। এর পূর্বে নড়াইলের জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে নড়াইল জেলা শিক্ষা অফিসার অভিযোগসমূহ সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ২৮ জুন সতকর্তামূলক পত্র দিয়ে সরকারি আইন/বিধি/প্রবিধি মেনে কলেজের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
এছাড়া জেলা প্রশাসক উক্ত কলেজটি পরিদর্শনে গিয়ে নিয়মিত গভার্ণিং বডি গঠনের নির্দেশনা দেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপদে বহাল থাকার জন্য জেলা প্রশাসক ও যশোর শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিয়মিত গভার্ণিং বডি গঠন করেননি। তার ইচ্ছনুযায়ী আবারো চুপিসারে আটবারের মতো এডহক কমিটি গঠনের জন্য কার্যক্রম চালাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী কলেজটি রক্ষার্থে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাকে অপসারণসহ তার দুর্নীতির তদন্ত পূর্বক তার বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ মাহমুদুল হক জানান, ‘অজ্ঞতা বশত: মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দ্বারা বিধিবহির্ভূতভাবে রেজুলেশন করা হয়েছে কথাটা ঠিক। কিন্তু কোনো অর্থ আত্মাস্যাৎ করা হয়নি।’
অভিযোগকারী মোল্যা টিপু সুলতান জানান, ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ মাহমুদুল হক একজন দুর্নীতিবাজ ও অর্থ আত্মসাতকারী। জনস্বার্থে কলেজটি রক্ষা করতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দুর্নীতি অনিয়মের তদন্তপূর্বক তার বিরূদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, ‘হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়টি তদন্তপূর্বক সরকারি আইন/বিধি/প্রবিধি মেনে কলেজের সকল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দিয়ে তাকে সতর্কতামূলক পত্র প্রদান করা হয়েছে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের পরিচালক শেখ হারুন অর রশিদ জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহের সরেজমিনে তদন্ত করা হচ্ছে। যাচাই বাছাই সাপেক্ষে দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’