জীবনের শেষ গ্র্যান্ডস্ল্যামে কেঁদে বিদায় নিলেন সানিয়া

চলতি মৌসুম শেষেই টেনিসকে বিদায় বলবেন ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। এ কথা কমবেশি সবারই জানা। কিন্তু ক্যারিয়ারের শেষ গ্র্যান্ডস্ল্যামে হেরে চোখের কোনে পানি নিয়ে বিদায় জানাবেন টেনিসের এ মহাতারকা! তা হয়তো অনেকেরই অজানা ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টাইমসের খবরে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মিক্সড ডাবলস-এর ফাইনালে ব্রাজিলের জুটি লুইসা স্টেফানি ও রাফায়েল মাতোসের কাছে হেরে গিয়েছেন সানিয়া মির্জা ও রোহান বোপান্না জুটি। ৬-৭, ২-৬ সেটে হারল ভারতীয় জুটি।
পিছনের দিকে তাকালে ভারতীয় টেনিসের নিরিখে সানিয়ার যাত্রা নিঃসন্দেহে বর্ণময়। ভারতীয় মেয়েরাও যে বিশ্বমানের টেনিস খেলতে পারে, সর্বোচ্চ পর্যায় সমানে সমানে লড়াই করতে পারে, তা প্রমাণ করেছে সানিয়ার র্যাকেট। কোর্টে প্রতিপক্ষকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে না চাওয়া সানিয়া শেষ বেলায় শুধু কাঁদলেনই না, তাঁর অসংখ্য অনুরাগীদেরও কাঁদালেন। কথা বলার সময় বার বার চোখের জল মুছেছেন। বার বার তাঁর গলা বুজে এসেছে। তবু স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছেন। পারেননি।
২০০৯ সালে সানিয়া অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে মিক্সড ডাবলস খেতাব জিতেছিলেন মহেশ ভূপতিকে নিয়ে। খেলোয়াড় জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা সানিয়া চেয়েছিলেন সপ্তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব নিয়ে থামতে। রোহন বোপান্নাকে নিয়ে মিক্সড ডাবলসের ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেও শেষ রক্ষা হল না। ফাইনালে তাঁরা ব্রাজিলের স্টেফানি-মাতোস জুটির কাছে হারলেন ৬-৭ (২-৭), ২-৬ ব্যবধানে। সত্যিই কি হারলেন? ৪২ বছরের বোপান্নাকে নিয়ে ৩৬ বছরের সনিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলা কম কৃতিত্বের কী!
খেলোয়াড় জীবনের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামে ভারতীয় টেনিসের মান আরও এক বার বুঝিয়ে দিয়েছেন সানিয়া। ফাইনালের পর সানিয়া বলেছেন, ‘‘আমি কাঁদছি। এটা আসলে খুশি অশ্রু। চোখের এই জল দুঃখের নয়। চাইলে আরও গোটা দুয়েক প্রতিযোগিতা খেলতেই পারতাম। ২০০৫ সালে মেলবোর্ন থেকেই টেনিস যাত্রা শুরু করেছিলাম। তখন আমার বয়স ছিল ১৮। সেরিনা উইলিয়ামসের সঙ্গে খেলেছিলাম। আমার জীবনে রড লেভার এরিনার আলাদা জায়গা রয়েছে। গ্র্যান্ড স্ল্যাম কেরিয়ার শেষ করার জন্য এর থেকে ভাল জায়গা আমার কাছে নেই।’’
ফাইনালে কোর্টের পাশে স্বামী শোয়েব মালিক ছিলেন না। তিনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ খেলতে ব্যস্ত। দু’জনের সম্পর্কও আর আগের মতো নেই। তাঁর কথা বললেনও না। চার বছরের ইজ়হান মির্জা মালিক কিন্তু মাকে ফাইনালে সারাক্ষণ উৎসাহিত করেছে। ম্যাচের পর সানিয়ার মুখে শোনা গিয়েছে ছেলের কথা। সানিয়া বলেছেন, ‘‘আমার পরিবারের সকলে এখানে রয়েছে। কখনও ভাবিনি ছেলের সামনে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলতে পারব। সেটাও হল।’’
সূত্র: আনন্দবাজার।