নিম্নমানের বীজ রোপণ, ক্ষতির মুখে চাষিরা

এম মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী প্রতিনিধি: রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে প্রতারণায় পড়ে নিম্নমানের ইন্ডিয়ান পেঁয়াজের বীজ আবাদ করে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। উচ্চ ফলনশীল লালতীর ও রেড কিং পেঁয়াজ বীজের জায়গায় নিম্নমানের ইন্ডিয়ান বীজ কিনে প্রতারণার শিকার পাঁচ শতাধিক চাষি। পেঁয়াজের বেশিরভাগ চারা নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে বালিয়াকান্দি সদর, বহরপুর, জামালপুর, জঙ্গল, ইসলমপুর, নবাবপুর, নারুয়ার, ভীমনগর, পূর্ব মৌ-কুরীসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, জমির বেশিরভাগ পেঁয়াজের চারা শুকিয়ে গেছে। রোপণের কিছুদিন পরই নষ্ট হয়ে গেছে এসব। যেসব চারা টিকে আছে সেগুলোতেও পেঁয়াজ আসেনি।
ভীমনগর গ্রামের আলীম শেখ বলেন, প্রতি বিঘায় ৬০ থেকে ৭০ মণ পেঁয়াজ আবাদ হয়। এ বছর বেশি লাভের আশায় উচ্চ ফলনশীল লালতীর ও রেড কিং জাত মনে করে পাঁচ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করি। আবার এলাকার চাষি ও আত্মীয়দের জন্য চার লাখ টাকার তিন মণ বীজ কিনেছি স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। কিন্তু বীজ বপণের পর চারা তুলে রোপণের কয়দিন পর দেখতে পাই ক্ষেতের সব চারা শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরে বুঝতে পারি বীজগুলো উচ্চ ফলনশীল লালতীর বা রেডকিং জাতের বীজ নয়। আমার সাথে প্রতারণা করেছে।
তার মতো সাতটি ইউনিয়নের দুই হাজারেরও বেশি পেঁয়াজ চাষি একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়ে সারা বছর সংসার চলে আমাদের। ব্যাংক থেকে লোন ও জমি লিজ নিয়ে বহু টাকা ধারদেনা করে বেশি লাভের আশায় উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজ মনে করে নিম্নমানের ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ আবাদ করে এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি আমরা। এখন কীভাবে এসব ধারদেনা পরিশোধ করব সে চিন্তায় দিন কাটছে আমাদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পেঁয়াজ ক্ষেত পরিদর্শন করা হয়েছে। এ উপজেলায় দুই হাজার একশত বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। যেসব পেঁয়াজ বীজ লাগানো হয়েছে সেগুলো এই আবহাওয়ার উপযোগী নয়। নিম্নমানের বীজ রোপণ করায় এমন হয়েছে। প্রায় পাঁচ’শ কৃষক নিম্নমানের বীজের চারা রোপণ করে ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। তাদের সহযোগিতায় নানা ধরনের কৃষি প্রণোদনা দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বলেন, চাষিরা যে বীজের চারা রোপণ করেছেন তা এই আবহাওয়া উপযোগী নয়। তাই বীজগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের কিছুটা আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এসব চাষিদের কৃষি প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।