নানা রোগের আক্রমণে চরম ক্ষতিতে রাজবাড়ীর পান চাষিরা

এম মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী প্রতিনিধি: রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে অর্থকারি ফসল চাষিরা পান চাষ করলেও সঠিক নির্দেশনা আর প্রয়োজনীয় পরামর্শ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পান চাষে।
ছত্রাক, পাতা পচা, পাতা পাকা ও কুঁচকে যাওয়া এবং পাতায় ছিটা দাগে নষ্ট হচ্ছে অধিকাংশ চাষির বরজের পান। জনের টাকা তুলতে পারছেন না তারা। চাষিদের অভিযোগ রয়েছে কৃষি বিভাগ থেকে সঠিক পরামর্শ ও সহযোগিতা না পাওয়ার।
তবে আশার কথা হল রাজবাড়ীর পান দেশের গন্ডি পেরিয়েও বিশ্বের ৭/৮টি দেশে রফতানি হয়। তাতে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়
পান একটি লতা জাতীয় অর্থকরী ফসল। যুগ যুগ ধরে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সবর্ত্র বাণিজ্যিকভাবে পান চাষ হচ্ছে। তবে রাজবাড়ী সদরেও স্বল্প পরিষরে পান চাষ হয়।
গতবছরে করোনায় পানে দাম পাননি। এবার আশা করেছিলেন ক্ষতি পুশিয়ে লাভের মুখ দেখবেন। কিন্তু এ বছর প্রচন্ড শীত ও লাগাতার ঘন কুয়াশায় নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হচ্ছে পান।
এখানে বাংলা, মিঠা, দেশী, ঝালি প্রভৃতি জাতের পান বরজে চাষ করা হয়।
প্রথমে এক বিঘার একটি পানের বরজ তৈরী করতে আড়াই/তিন লাখ টাকা খরচ হয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে প্রথম বছরেই খরচের অর্ধক টাকা উঠে আসে।
আর ওই পুরনো বরজ দিয়েই দশ বছর পর্যন্ত পান চাষ করা যায়। এতে সামান্য জন খরচ লাগে। তাই বংশানুক্রমে এই পেশা ধরে পান-চাষে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে রাজবাড়ী। এখানে পানের বরজে সাথী ফসল হিসেবে হলুদ ও মরিচ চাষ হয় একই জমিতে।
পান চাষে লাভও হয় প্রচুর। সবুজ সোনা নামে পরিচিত পানকে একটি ঔষধি গাছ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়, অর্থাৎ্ এর অনেক ঔষধি গুণও রয়েছে।
সবুজ সোনা নামে পরিচিত পানকে একটি ঔষধি গাছ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়, অর্থাৎ্ এর অনেক ঔষধি গুণও রয়েছে।
তাতে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির পান চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখন উৎপাদন খরচ বাড়লেও দাম ভালো পাচ্ছে চাষিরা ।
একটি পান পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩ টাকা ও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা ধরে। স্থানভেদে বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে কোথাও কোথাও । পান হচ্ছে অনেকের কাছে জনপ্রিয় খাবার ,বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পান না থাকলে পূর্ণতা পায়না অনুষ্ঠান।
বালিয়াকান্দি উপজেলায় জামালপুর,বহরপুর জঙ্গল,নবাবপুর ও বালিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দৃষ্টি দিলেই মিলবে পান চাষের বরজ । যারা গ্রামে পান চাষ করে তাদেরকে বলা হয় বারই।
তারমধ্যে জামালপুৃরের চার দিকে তাকালেই দেখা মিলবে শত শত পান চাষের বরজ ।
বালিয়াকান্দির মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের উপযোগী হওয়ায় পান চাষে আগ্রহ বারছে চাষিদের । ঝুঁকি কম থাকায় নিরাপদ পান চাষে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা পান চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছে ।
কম পুঁজি খাটিয়ে ১ একর জমিতে পান চাষ করে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভাব বলে জানিয়েছে চাষিরা ।
কেউ কেউ বংশ পরংপরায় তারা এ কাজের সাথে জড়িত থেকে হয়েছে স্বাবালম্বি। জামালপুর গ্রামের পান চাষি সুদির চন্দ্র মন্ডল বলেন, আমার বাব দাদারা পান চাষ করে তা বিক্রি করে জীবন যাপন করে গেছে ,আমরাও এই পেশায় কাজ করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি।
পান হচ্ছে লতা বিশিষ্ট একটি গাছ যা একাবার রোপন করলে কয়েক বছর ধরে পান পাতা হয়ে থাকে । অল্প পরিচর্চা করলেই ভালো ফলন পাওয়া যায় । গ্রামবাংলা এমনকি শহরে অনেকেই পান খেয়ে থাকেন ।
তাই শহর কি গ্রামে সব খানেই রয়েছে পানের চাহিদা । বালিয়াাকান্দির পান মিস্টি পান অধিক সুস্বাদু হওয়ায় এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের চাহিদা মিটিয়েও পাকিস্থান ,ইরান,ইরাক সৌদি আরবসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে ।
এমন মাটিতে পান চাষ হয়, যেখানে আর্দ্রতা বজায় থাকে। মাটি ও অনুকুল আবহাওয়া হওয়ায় এ এলাকার পানের স্বাদ ও মান খুবই ভালো । ক্ষতিকারক কিট নাশক ছাড়াই স্বাস্থ্যকর পান উৎপাদন করছে এখানকার চাষিরা ।
পানের বরজে অনেকের হয়েছে কর্ম সংস্থান । দিন মজুর সোনখান জানান আমাদের এলাকায় আমি বিভিন্ন পানের বরজে কাজ করে থাকি এতে যা আয় হয় তা দিয়ে আমার সংসার খুব ভালোই চলছে।
বালিয়াকান্দি উপ কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় ৮৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ করেছে কয়েক শত চাষিরা। আমাদের কৃষি অধিদপ্তর পক্ষে থেকে পান চাষিদের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোতা করে আসছি। এতে উপজেলা সহ বিভিন্ন এলাকায় পান চাষিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও অনেকে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
সঠিক পরামর্শ নিয়ে পান চাষ করলে দেশে পানের সরবরাহ যেমন বাড়বে, ভোক্তারাও উন্নতমানের পান পাবেন আর কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও হবে। তাই কাঙ্খিত ফলন পেতে পান চাষে কৃষি বিভাগ তদারকি বাড়াবে, এমনটাই দাবি পান চাষিদের।