ইসলামে মায়ের মর্যাদা অতুলনীয়। মায়ের ত্যাগের তুলনা হয় না। সন্তানের জন্য মা-ই বেশি ত্যাগ স্বীকার করেন। গর্ভধারণ, দুগ্ধপান, রাত জেগে সন্তানের তত্ত্বাবধানসহ নানাবিধ কষ্ট একমাত্র মা-ই সহ্য করেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার শুকরিয়া ও তোমার মা-বাবার শুকরিয়া আদায় করো।’ (সুরা লুকমান: ১৪)
মা-বাবার জন্য দোয়া শিখিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا ‘হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৪)
পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত না করতে এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের উফ্ (বিরক্তিও অবজ্ঞামূলক কথা) বলবে না এবং তাদের ধমক দেবে না; তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলবে। মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার ডানা প্রসারিত করো এবং বলো, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৩-২৪)
ওয়াইস আল কারানি (রহ.) ছিলেন একজন শীর্ষ পর্যায়ের তাবেয়ি। মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকার কারণে রাসুল (স.)-এর সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করতে পারেননি। তাঁর বিষয়ে ওহি মারফত রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জানানো হয়েছিল।
মাতৃসেবায় উওয়াইস আল কারানি (রহ.) এতটাই মর্যাদা লাভ করেছিলেন যে রাসুল (স.) তাঁর প্রশংসা করেছেন এবং তাঁর সঙ্গে কারো সাক্ষাৎ হলে তাঁর কাছে দোয়া চাইতে বলেছেন। ওমর (রা.) ওয়াইসের সাক্ষাতের জন্য উদগ্রীব থাকতেন, যাতে তাঁর (ওয়াইসের) কাছে মাগফেরাতের দোয়া চাইতে পারেন। শেষ পর্যন্ত ওমর (রা.) তাঁকে পেয়ে যান এবং নিজের জন্য দোয়া চেয়ে নেন। (দেখুন: সহিহ মুসলিম: ৬৩৮৬) এই হাদিসের অন্যতম শিক্ষা হলো—মায়ের সেবায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়। ফলে মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির দোয়া কবুল করেন।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.) এর কাছে এসে বলল- আমি জিহাদে অংশ নিতে চাই, কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য ও সক্ষমতা নেই। তখন রাসুল (স.) তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার মাতা-পিতার কেউ কি জীবিত আছেন?’ লোকটি বলল, আমার মা জীবিত। তখন রাসুল (স.) বললেন, ‘তাহলে মায়ের সেবা করে আল্লাহর নিকট যুদ্ধ-সংগ্রামে যেতে না পারার অপারগতা পেশ করো। এভাবে যদি করতে পার এবং তোমার মা সন্তুষ্ট থাকেন তবে তুমি হজ, ওমরা এবং জিহাদের সওয়াব পেয়ে যাবে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং মায়ের সেবা করো।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ: ১৩৩৯৯)
বস্তুত মা-বাবার তুলনা অন্য কারো সঙ্গে চলে না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২১) অর্থাৎ মা-বাবার সেবা করে সহজেই জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। একইভাবে মা-বাবার মনে কষ্ট দিয়ে যত আমলই করা হোক না কেন জাহান্নামই হবে ঠিকানা।
সন্তান নিজের দুঃখে, সুখে সর্বাবস্থায় বাবা-মার দিকে যদি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সন্তুষ্টির নজরে তাকায়, তাহলে সন্তানের আমলনামায় কবুল হজের সওয়াব লিখে দেওয়া হয়। এমনকি সে সন্তান যদি পিতামাতার দিকে ১০০ বারও তাকায়, তার আমলনামায় ১০০ কবুল হজের সওয়াব দেওয়া হবে। (দ্রষ্টব্য- শুআবুল ঈমান: ৭৪৭২; মেশকাতুল মাসাবিহ: ৪৯৪৪)
মা-বাবার খেদমত ও তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণের প্রতিদান যেমন অফুরন্ত, তেমনি তাদের অবাধ্য হওয়া এবং তাদেরকে কষ্ট দেওয়ার গুনাহও মারাত্মক। একটি হাদিসে নবীজি (স.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের সবচেয়ে মারাত্মক গুনাহর কথা বলব? সাহাবাগণ বললেন, জি, বলুন। রাসুল (স.) বললেন, তা হলো, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া অথবা মিথ্যা কথ্যা বলা।’ (মুসলিম: ২৬৯)
অন্য একটি হাদিসে নবীজি (স.) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের জন্য বদদোয়া করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘তার নাক ধূলি ধূসরিত হোক। কথাটা তিনবার বললেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কার কথা বলছেন? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার কোনো একজনকে অথবা উভয়জনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল অথচ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। অর্থাৎ তাদের খেদমত করে জান্নাতের উপযুক্ততা লাভ করতে সক্ষম হলো না।’ (মুসলিম: ২৫৫১)
অতএব, পিতা-মাতার সঙ্গে উত্তম আচরণেই আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত। তাঁরাই জান্নাত লাভের সহজ পথ। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মা-বাবার সেবা করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
পিতা মাতার মর্যাদা, মায়ের সেবা হাদিস আরবি, মা বাবাকে কষ্ট দিলে কি হয়, মা বাবার সাথে ভালো আচরণ, ইসলামে মা বাবার ভরণ পোষণ, মা বাবা সম্পর্কে ঘটনা, মা বাবার অধিকার, মায়ের দোয়া নিয়ে হাদিস, মা বাবার সেবা, মা বাবার সাথে ভালো আচরণ, মায়ের সেবা হাদিস আরবি, মা বাবাকে কষ্ট দিলে কি হয়, মা বাবার অধিকার,