চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় জ্বরের সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা থাকায় গত মঙ্গলবার সাকিবুল হাসান নামের এক কিশোরকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে পরদিন পরীক্ষা করলে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ওই রাতে তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাকিবুল হাসানের পাশাপাশি চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার আগ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরো সাতজন হাসপাতালে ভর্তি হয়।
এই সাতজনের মধ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) চারজন, হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুইজন এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে একজন ভর্তি।
শুধু তাই নয়, দেড় মাস ধরে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে মে—এই পাঁচ মাস ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭। আর এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ মে পর্যন্ত চার মাস ২৫ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১৬৭ জন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ।
গত জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক শিশুসহ তিনজন মারা গেছে। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাউছ বলেন, ‘সাধারণত বর্ষার আগে ও বর্ষার পরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ে। কিন্তু গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার বছরের এই সময়ে ডেঙ্গু রোগী অনেক বেড়ে গেছে। ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
কয়েক দিন আগে নগরের খুলশী এলাকায় গিয়ে একটি পরিত্যক্ত ঘরে এডিসের প্রচুর লার্ভা পাওয়া গেছে। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় লার্ভা থাকতে পারে। নগরের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও আমরা লার্ভা পেয়েছি।’ তিনি বলেন, এখনই বোঝা যাচ্ছে গত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু আরো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। গত বছর এই সময় পর্যন্ত কোনো রোগী মারা যায়নি।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ১২ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন আছে সাকিবুল হাসান (১৪)। মশারি টাঙানো আছে।
জানতে চাইলে সাকিবুলের মা রিজুআরা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে শহরে একটি প্রতিষ্ঠানে কয়েক দিন আগে চাকরি করতে গিয়েছিল। সেখানে হঠাৎ ১০৪ ডিগ্রি জ্বর, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা ও বমি হলে সে বাড়ি চলে আসে।’
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া জানান, জেলায় গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত পাঁচ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল ৪১ জনের। ২০২১ সালে আক্রান্ত ২৭১ জনের মধ্যে মারা গিয়েছিল পাঁচজন। ২০২০ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ১৭ জনের। ওই বছর মৃত্যুর কোনো খবর নেই।