রমজানের প্রথম দিনেই কারওয়ানবাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান

পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিনে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ বাজারের কিচেন মার্কেটে অভিযান শুরু করেন সংস্থার সদস্যরা। অভিযানের নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আব্দুল জব্বার মণ্ডলসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা।
রোজা শুরুর আগেই দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুরো মাস তদারকি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রথমেই কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে তদারকি করেন। এ সময় তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ ও দাম সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন।
পরে চালের বাজার হয়ে মাছ বাজারে যান কর্মকর্তারা। এ সময় তারা দেখতে পান, অনেক বিক্রেতার কাছে মাছ কিনে আনার ক্রয় রশিদ নেই। এ জন্য সালাম নামের এক মাছ বিক্রেতাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি অন্য বিক্রেতাদের সচেতন করা হয়।
পরে সবজির বাজারে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করে সংস্থাটি। এ সময় ৪০ টাকায় প্রতি কেজি বেগুন কিনে এনে একেক বিক্রেতাকে একেক দামে বিক্রি করতে দেখতে পান কর্মকর্তারা। ক্রয় রশিদ ও পণ্যের মূল্য তালিকা না থাকায় মো. নয়ন নামের এক সবজি বিক্রেতাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া হাসান নামের এক খুচরা লেবু বিক্রেতাকে ১০০ টাকা ও আলমগীর নামের এক পাইকারি লেবু বিক্রেতাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
এরপর মুরগির বাজার তদারকি করে অভিযান সমাপ্তি করা হয়।
অভিযান শেষে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আজকে কারওয়ান বাজারে দেখেছি ৪০ টাকা করে বেগুন কিনে একজন বিক্রি করছেন ৫০ টাকা, আবার আরেকজন বিক্রি করছেন ৭০ টাকা। বাজারে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে ছয় টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। সেই লেবু বাইরে ১০-১২ টাকা দরে বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা তো হতে পারে না, এটা ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা। তাই এক বিক্রেতাকে আমরা আইন অনুযায়ী জরিমানা করেছি।
তিনি আরও বলেন, মাছ বাজারে তদারকিকালে আমরা দেখেছি, তারা ক্রয় রশিদ রাখেন না। আমরা তাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছি। বাজারের সাধারণ সম্পাদককেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিষয়টি যেন তারা আজকের মধ্যে বসে ঠিক করে নেন। আগামীকাল আমাদের টিম আবার পর্যবেক্ষণে আসবে।
তিনি বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার চারটি বড় প্রতিষ্ঠান ফার্ম পর্যায়ে মুরগির দাম ঠিক করেছে। সেটি এখনো বাজারে আসেনি। কিন্তু আজকে মুরগির বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমেছে।
মুরগির নতুন চালান না আসার আগেই কীভাবে দাম কমলো সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক আরও বলেন, ২০২৩ সাল হবে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা ভোক্তা, ব্যবসায়ী, সরকারি বিভিন্ন সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করবো। আমরা পারস্পরিক পরিপূরক হবো। আর যারা সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবেন, যারা মজুদ করার চেষ্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান হবে কঠোর। আমাদের ব্যবসায়ীরা অবশ্যই লাভ করবেন। দেশের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব তারা দেন। রাজস্ব প্রদানের পাশাপাশি ভোক্তাদের প্রতি তাদের যে নৈতিক দায়িত্ব, ভোক্তার অধিকারের জায়গায় ব্যবসায়ীদের আরও সচেতন হবেন।
এর আগে অভিযান শুরুর আগে মনজুর শাহরিয়ার বলেন, রমজানে কিছু বিশেষ সবজির দাম বেড়ে যায়। এগুলো আমরা আজকে তদারকি করব। এ ছাড়া মুদি সামগ্রী ও মুরগি নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কি না সেটি তদারকি করবো।
ভোক্তা অধিদপ্তর জানায়, ঢাকায় মোট সাতটি স্থানে এই অভিযান চালানো হয়েছে, পুরো রমজানজুড়ে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।