বিএনপি নেতাদের বিবেক-বুদ্ধিই শুধু হারায়নি, চক্ষুলজ্জাও হারিয়ে গেছে: কাদের

আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেতারা অসংলগ্ন প্রলাপ বকছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, মনে হয়, রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তাদের শুধু বিবেক-বুদ্ধিই নয়, চক্ষুলজ্জাও হারিয়ে গেছে।
আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে এই বিবৃতি দেন তিনি।
বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রেতাত্মা’- মির্জা ফখরুলের এই মন্তব্য শতাব্দীর সেরা কৌতুক শুধু নয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তাদের চরম বিদ্বেষ ও আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দ এমন অসংলগ্ন প্রলাপ বকছে। মনে হয় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তাদের বিবেক-বুদ্ধিই শুধু হারায়নি চক্ষুলজ্জাও হারিয়ে গেছে। বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ইতিহাসের সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্ত ও আড়াই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে এদেশের স্বাধীনতা অর্জন করে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই ধরনের অশালীন ও ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্য শুধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুমহান ঐতিহ্যকে অসম্মানিত করেনি বরং ত্রিশ লক্ষ শহিদের আত্মত্যাগকেও অপমানিত করেছে। একইসাথে তিনি সমগ্র জাতি ও জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তার রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। মির্জা ফখরুলের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য সমগ্র জাতির অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত হেনেছে। আমরা মির্জা ফখরুলের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রণীত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান। পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে যে নীতি-আদর্শ শক্তি ও প্রেরণা যুগিয়েছে তা এ রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে সংবিধানে প্রতিফলিত হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা। বিএনপি জন্মলগ্ন থেকে আদর্শগতভাবে এ রাষ্ট্রের জন্মের মূলচেতনাবিরোধী রাজনীতি করে আসছে। মির্জা ফখরুল কিছু দিন পূর্বে মন্তব্য করেছিলেন ‘পাকিস্তান আমলে ভালো ছিলাম’। তাদের পাকিস্তান প্রীতি নতুন কোনো বিষয় নয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান এদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূ-লুণ্ঠিত করে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে পাকিস্তানি ভাবাদর্শে বাংলাদেশকে পরিচালিত করেছিল।
স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারাকে পরিপুষ্ট করেছিল। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে খালেদা জিয়া একইভাবে পাকিস্তানি ভাবাদর্শে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। ক্ষমতা দখলের নীলনকশা বাস্তবায়নে ১৯৯১ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নিয়েছিল বলে কয়েক বছর আগে সে দেশের আদালতে সংস্থাটির তৎকালীন প্রধান জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছিল। অন্যদিকে পরাজিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এক জেনারেল আসিফ নাওয়াজ জানজুয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া শোকবার্তা পাঠিয়ে জাতির ঐতিহাসিক সংগ্রামের চেতনার মূলভিত্তিতে আঘাত করেছিল। বিএনপি চেতনায় ও মননে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তার প্রতিভূ পাকিস্তানকে ধারণ করে।