লালমনিরহাটের চরাঞ্চলে চাষীদের পাশে দাঁড়িয়েছে এমফোরসি প্রকল্প

মাজহারুল ইসলাম বিপু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের চরাঞ্চলে এখন বিভিন্ন ফসলের সমারোহ। চারদিকে শুধু ফসল আর ফসল। মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, গাঁজর, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ হচ্ছে তিস্তার বিস্তীর্ণ চরে। যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে চাষীরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পেলেও এবারে বাংলাদেশ সরকার ও সুইজারল্যান্ডসরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এমফোরসির নামের একটি প্রকল্প চরবাসীর পাশেদাড়িয়েছে। কাজ করে যাচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণ, গরু, ছাগল পালনসহ নানা কর্মসূচী নিয়ে।
ইতিমধ্যে সুফল ভোগ করতে শুরুকরেছে চরাঞ্চলের মানুষ। প্রতি বছরের মত এ বছরেও তিস্তার বুকে অনেকটাঅংশজুড়ে চর পড়েছে। যে কারণে চরাঞ্চলের কৃষক সেই চরের পলি পড়া জমিকে কাজেলাগিয়ে বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন। হয়েছেও বাম্পার ফলন। এ বছর তিস্তায় ১০হাজার ৮০০ হেক্টর জমি চরে পরিণত হয়েছে। যার মধ্যে ৮ হাজার হেক্টর জমিতেফসলের চাষাবাদ হয়েছে। যা গত বছরের থেকে ৫শ’ হেক্টর জমিতে বেশি চাষাবাদহয়েছে। প্রতিবছর কৃষকেরা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চরে পাট, তামাক আলু,মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, গাঁজর, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ করেথাকে। ভাল ফলন হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে কৃষকেরা তাদেরউৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে না পারায় মধ্যসত্তভোগী ও স্থানীয় কিছুব্যবসায়ীর নিকট জিম্মি থাকতে হয়। ফসল বিক্রিতে ন্যায্য মূল্য হতে বঞ্চিতহন কৃষকেরা। আর ফসল ঘরে এলেও উৎপাদিত খরচ পর্যন্ত উঠে না।
গত ২০২০ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশ সরকার ও সুইজারল্যান্ড সরকারের অর্থায়নে পরিচালিতএমফোরসি নামের একটি প্রকল্প লালমনিরহাটের সদর উপজেলা, আদিতমারী, কালীগঞ্জও হাতীবান্ধা উপজেলার চরবাসীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। চরাঞ্চলের মানুষদেরপ্রশিক্ষণ, বীজ, সার প্রয়োগে পরামর্শ, উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করণ,নারীদের গরু ছাগল পালনসহ নানা কর্মসূচী। ইতিমধ্যে সুফল ভোগ করতে শুরুকরেছে চরাঞ্চলের ১৮ থেকে ২০ হাজার কৃষক। প্রকল্পটির পাশাপাশি কৃষিসম্প্রসারণসসহ অন্যান্য সংস্থার এগিয়ে আসার দাবী চরবাসী মানুষের।
ধরলা নদীর চরের কৃষক শামসুল ইসলাম জানান, তিনি দশ বছর ধরে তরমুজ, কুমড়াসহনানান ফসল চাষ করেন। কিন্তু ভাল বীজ না পাওয়ায় তার ফলন ভাল হতো না। ফলেদামও পেতেন না। এখন এমফোরসির প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে, ভাল বীজও কিটনাশক সার নিয়ে চরে আবাদ করেন। এখন ভাল ফলন ও দেশের বিভিন্ন জেলায়বাজারজাত করে লাভবান হয়েছেন তিনি। শুধু তিনিই নন তারমত হাজারো কৃষক আজউপকৃত।
তিস্তা শৈলমারী চরে শাহানাজ পারভীন জানান, বন্যার সময় গরু ও ছাগল মাটিতেরাখার কারণে নানান রোগ বালাই দেখা দিত। চিকিৎসার অভাবে মারা যেত। আমাদেরএলাকায় এমফোরসির প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে ছাগলের উচু ঘর করে সেখানে রাখায় আর রোগ ব্যাধি দেখা যায় না।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: হামিদুর রহমান জানান, লালমনিরহাট জেলায় চরএলাকায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। এর মধ্যেমিষ্টি কুমড়া, তরমুজ গম, ভুট্টা চিনা বাদামসহ বিভিন্ন ফসল। চরে ২০২০ সালথেকে এমফোরসি নামের প্রকল্পটি কাজ করে যাচ্ছে তাদের প্রধান কাজফার্মাসদেরকে তারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে গিয়েস্থানীয়ভাবে যে কৃষকগুলো আছে তাদেরকে আবার প্রশিক্ষিত করছে। ফলেমধ্যসত্তভোগী কৃষকদের আর ঠকাতে পারছেন না।প্রকল্পটি কৃষকদেরকে উৎপাদিতফসল বাজারজাত করণসহ লাভবান করে দিচ্ছে। এই প্রকল্পটির পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন এনজিও যদি কাজ করে তাহলে চর এলাকার জীবনযাত্রার মান উন্নতহবে।
মাজহারুল ইসলাম বিপু