ছাত্রের অশোভন আচরণে শিক্ষকের পদত্যাগ
শাফিউল কায়েস, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ পরীক্ষার হলে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থী কর্তৃক অপমানিত হয়ে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন ট্যুরিজম এবং হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক ও বিভাগের সভাপতি বাপন চন্দ্র কুরি।
জানা যায়, ওই শিক্ষার্থীর নাম ইমন শেখ। তিনি ট্যুরিজম এবং হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বুধবার (১৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সামনে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। এসময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষককেরা এ মানববন্ধনে অনশগ্রহণ করেন এবং প্রতিবাদ জানান।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুবায়ের সাব্বির বলেন, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইমন শেখ পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক বাপন চন্দ্র কুরির সাথে অশোভন আচরণ করেন এবং এক পর্যায়ে উক্ত শিক্ষার্থী কলম ছুড়ে মারেন। এরপর পরই স্যার রেজিস্ট্রার দপ্তরে গিয়ে পদত্যাগ পত্র জমা দেন।
আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হুমায়ুন কবির বলেন, শুধু কি বাপন চন্দ্র কুরি স্যার চলে গেছেন? আমার বিভাগের একজন শিক্ষক এসব অন্যায় অনিয়ম সহ্য করতে না পেরে চলে গেছে। প্রতিনিয়তই নীরবে নিভৃতে আমরা এসব সহ্য করে যাচ্ছি। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন আছে কিন্তু কোন অ্যাক্টিভিটি নাই কেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আমরা মিডেল ইস্ট থেকে প্রাচীন যুগে পদার্পণ করেছি। আমরা যেন যুদ্ধের বিপরীতে যুদ্ধ করছি। সবাই যে যার স্বার্থে জড়িয়ে পড়েছি। কখনো আমরা সামষ্টিক চিন্তা করি না।
তিনি আরও জানান, আমার আইন ফ্যাকাল্টির সাবেক ডীনের সাথে দরজা বন্ধ করে অন্যায় করেছে তার কি বিচার হয়েছে। রাসেল হলের প্রভোস্ট, বিজয় দিবস হলের প্রভোস্ট এর সাথে অন্যায় করা হয়েছে তার কি বিচার হয়েছে। কোন বিচার এ বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না। এ কারণে ছাত্ররা মনস্টার হয়ে গেছে।
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড জেনিটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক এমদাদুল হক শরীফ জানান, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আমরা রাজপথে নেমে আসি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা লাঞ্চিত হলে কখনোই প্রশাসনকে কঠোর দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখি নাই। এর ফলেই প্রতিনিয়ত এ ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আপসকামিতার মনভাবের কারণেই অপরাধী চক্র বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনকে বাধ্য করে এ ঘটনাসহ পূর্বের সকল শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনার তদন্তের মধ্যদিয়ে একটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে শিক্ষক সমিতির কাছে আহবান জানাই।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সালেহ আহমেদ জানান, আমি বাপন চন্দ্র কুরিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। নিপাট ভদ্রলোক বলতে যা বোঝায় তিনি সেরকমই একজন। তিনি তার বিভাগের জন্য নিবেদিত প্রাণ। এরপরেও তিনি যখন তার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সহযোগিতা না পান, শিক্ষার্থীদের থেকে অসম্মানিত হন তখন তার রাগ করাটা খুবই স্বাভাবিক। তিনি যেই রাগটি করেছেন এটি রাগের পচন্ড মাত্রা। মানুষ যখন গর্জন করে তখন সেটা হল সবচেয়ে কম রাগ। কিন্তু যখন সে কাউকে না জানিয়ে নিরবে-নিভৃতে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে চলে যান তখন বুঝতে হবে তার রাগের মাত্রা, ক্ষোভের মাত্রা, বিরক্তিকর মাত্রা চরম পর্যায়ের।
তিনি আরও জানান, আমরা প্রশাসনের কাছে যাব, এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত চাইবো এবং তিন যেন সুষ্ঠ পরিবেশসহ সসম্মানে ফেরত আসতে পারেন এ দাবি জানাব। একইসাথে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলতে ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা- কর্মচারী যার যেই ভূমিকা আছে তা যেন পালন করে সে বিষয়ে সকলকে আহবান জানাব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ কিউ এম মাহবুব জানান, উক্ত শিক্ষার্থীকে আমরা সাময়িক বহিষ্কার করেছি। আর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।আগামীকাল তারা সাজেস্ট করবে তারা কি করবে।
এ বিষয়ে ইমন শেখের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।