উদ্যোক্তাকে চাকুরিচ্যুত করার আড়াই মাস পরে চেয়ারম্যানের নোটিশ

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: সরকারি বিধি অমান্য করে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইউনিয়ন পরিষদের এক নারী উদ্যোক্তাকে চাকুরিচ্যুত করার দুই মাস ১৮ দিন পরে কারণ দর্শণার নোটিশ পাঠিয়েছে কুমারখালীর চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মেছের আলী খাঁ। রোববার (১৯ মার্চ) ওই উদ্যোক্তার বাড়িতে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু চেয়ারম্যানের নোটিশ গ্রহণ করেনি ওই উদ্যোক্তা।
ভুক্তভোগী নারীর স্বজনদের ধারণা, বিধি অমান্য করে উদ্যোক্তাকে চাকুরিচ্যুত করায় আইনগত ভাবে ফেঁসে গেছেন চেয়ারম্যান। সেজন্য অফিসিয়াল কাগজপত্রাদি ঠিকঠাক করতে এতদিন পরে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন চেয়ারম্যান।
এরআগে গত ১ জানুয়ারী স্থানীয় এক সাংবাদিককে বিয়ে করার অভিযোগে মীম খাতুন নামের নারী উদ্যোক্তাকে মৌখিকভাবে চাকুরিচ্যুত করে চেয়ারম্যান। এঘটনায় গত ১৯ জানুয়ারী ( বৃহস্পতিবার) দুপুরে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই নারী মীম খাতুন (২৩)। গত ৬ ফেব্রুয়ারিতে উভয়পক্ষকে ডেকে শুনানি করেন ইউএনও। তবে এখন পর্যন্ত রায় প্রকাশ করেনি ইউএনও।
লিখিত অভিযোগ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, চরসাদিপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মীম খাতুন ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুআরি তারিখ থেকে পাঁচ বছরের জন্য চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের নারী উদ্যোক্তা হিসেবে চেয়ারম্যানের সাথে লিখিত চুক্তিবদ্ধ হন। এরপর থেকে তিনি সেখানে কর্মকর্ত। কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজকের আলো পত্রিকার কুমারখালী প্রতিনিধি মিজানুর রহমানের সাথে গত ১৬ই ডিসেম্বর তাঁর বিয়ে হয়। গত ২৯ ডিসরম্বর তাঁর বিয়ের খবর চেয়ারম্যান জানতে পেরে চলতি বছরের এক জানুয়ারি তাকে মৌখিকভাবে চাকুরিচ্যুত করে পরিষদ থেকে বের করে দেন।
আরো জানা যায়, মীম তাঁর চাকুরি ফিরে পেতে চেয়ারম্যানকে একাধিকবার অনুরোধ করেছেন। তবুও চেয়ারম্যান তাকে পরিষদে ঢুকতে দেননি। করতে পারেননি। পরে গত ১৯ জানুয়ারী ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন মীম খাতুন। গত ৬ ফেব্রুয়ারিতে উভয়পক্ষকে ডেকে শুনানি করেন ইউএনও। তবে শুনানির কোনো রায় এখনো প্রকাশ করেনি ইউএনও। এরই মাঝে চেয়ারম্যান তাঁর অপরাধ ঢাকতে গত ১৯ মার্চ উদ্যোক্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। তবে চেয়ারম্যানের নোটিশ গ্রহন করেনি উদ্যোক্তা।
এবিষয়ে মীমের স্বামী সাংবাদিক মিজানুর রহমান বলেন, বিধি অমান্য করে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁর স্ত্রীকে চাকুরিচ্যুত করায় আইনগত ভাবে ফেঁসে গেছেন চেয়ারম্যান। সেজন্য অফিসিয়াল কাগজপত্রাদি ঠিকঠাক করতে এতদিন পরে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন চেয়ারম্যান। তবে তাঁর স্ত্রী নোটিশ গ্রহণ করেনি।
ভুক্তভোগী মীম খাতুন বলেন, চেয়ারম্যানের সাথে তাঁর পাঁচ বছরের লিখিত চুক্তি ছিল। কিন্তু সাংবাদিককে বিয়ের করায় বিনা নোটিশে চেয়ারম্যান তাঁর চাকুরি খেয়েছেন। ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবি করেছেন তিনি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মেছের আলী খাঁ বলেন, তাঁর সমস্যা হচ্ছিল তাই তিনি মীমকে চাকরি থেকে বাদ দিয়েছেন। এনিয়ে ইউএনও অফিসে শুনানি হয়েছে। এখন স্থায়ীভাবে বাতিল করার জন্য মীমকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
ইউএনও বিতান কুমার মন্ডল বলেন, পরিষদের কোনো উদ্যোক্তাকে বাদ দিতে হলে প্রশাসনকে জানিয়ে প্রথমে শোকজ নোটিশ করতে হয়। চেয়ারম্যান ইচ্ছে করলেই এভাবে কাউকে বাদ দিতে পারেন না। ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুনানি হয়েছে। ডিডিএলজি স্যার ছুটিতে রয়েছেন। স্যার আসলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।