কালাইয়ে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো ধানের চারা রোপণ উদ্বোধন
এস এম আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার জনপ্রিয় করতে গ্রামের বিস্তীর্ণ জমি একত্রিত করে শুরু হয়েছে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ। ট্রেতে বীজ বপন করে উৎপাদিত ধানের চারা রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে মাঠে রোপণ করা হচ্ছে। এতে ফসল পরিপক্ক হলে কৃষকেরা কম্বাইন হার্ভেস্টারের মাধ্যমে তাদের ক্ষেতের ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারবে।
ট্রেতে বীজ বপনের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় পরিপক্ক চারা উৎপাদন করে জয়পুরহাটের কালাইয়ে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমলয়ে বোরো ধান চাষাবাদে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ পদ্ধতির উদ্বোধন করা হয়েছে।
খরিপ মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সমলয়ে বোরো ধান চাষাবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের কাথাইল গোপনাথপুরের চক মাঠে এসব পরিপক্ক চারা শ্রমিক ছাড়াই যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রোপণ করা হয়। এবার ৫০ একর বিঘা জমিতে স্থানীয় কৃষকেরা কৃষি অফিসের সহায়তায় এ চাষ করছে।
এ উপলক্ষ্যে কাথাইল গোপনাথপুরের চক মাঠে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে সমাবেশের আয়োজন করেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এতে সভাপতিত্ব করেন কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.আবুল হায়াত। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার মোঃ এনামুল হক।
আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা.জুয়েল হোসেন, আহম্মেদাবাদ ইউপি’র চেয়ারম্যান আলী আকবর মন্ডল। উক্ত সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মেহেদী হাসান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, সমলয় ধান চাষ পদ্ধতিতে বিস্তীর্ণ জমি একত্রিত করে একই সময়ে একই সঙ্গে আধুনিক কৃষিযন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদের আওতায় আনা হয়ে থাকে। ট্রেতে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় বীজতলা। চারা হতে সময় নিয়েছে ১৩ দিন। সেখান থেকে চারা নিয়ে জমিতে রোপণ করা হচ্ছে। খরিপ মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সমলয়ে এবার কালাই উপজেলার ৭৫ জন কৃষকের ৫০ একর জমিতে এ পদ্ধতিতে ধানের চাষাবাদ হচ্ছে। সমলয় কর্মসূচির আওতায় জমিতে যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ থেকে কর্তন পর্যন্ত সব প্রক্রিয়া শেষ হবে। এই পদ্ধতিতে শ্রমিক সংকট ছাড়াও নানা প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। এতে উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি ধান চাষে লাভবান হবে কৃষকরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল হায়াত বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে মাটিতে ধানের চারা রোপণ করতে গিয়ে মাটি ভেঙে বীজতলা নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে চারা রোপণ সম্ভব হচ্ছে। যন্ত্র দিয়ে খুব অল্প সময়েই বিঘার পর বিঘা জমিতে নিখুঁতভাবে ধানের চারা রোপণ করা যায়। এতে সঠিক পরিমাপে ও দূরত্বে চারা রোপিত হওয়ায় অপচয়ও কমছে। শুধু তাই নয়, এই পদ্ধতিতে ফসলি জমিতে পোকা মাকড়ের বিস্তার রোধ, রোগ-বালাই দমন সহজতর হওয়ার পাশাপাশি কৃষি শ্রমিক নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হবে না আর কৃষকদের।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার মোঃ এনামুল হক বলেন, সমলয় চাষের মাধ্যমে বেশি শ্রমিকের আর প্রয়োজন হবে না। এতে উৎপাদন খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। লাভবান হবেন কৃষকরা। সমলয়ের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমানো। এ পদ্ধতিতে বিঘা প্রতি ফলন সনাতন পদ্ধতির চেয়ে ১০-১৫% বৃদ্ধি পাবে। সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে ধান রোপণ করলে প্রতি ঘণ্টায় ১ জন শ্রমিকের মাধ্যমে ১ বিঘা জমি চাষ করা যায়। এভাবে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টায় ৮ বিঘা জমি চাষ করলে খরচ ও অর্থে অপচয় কমে যাবে। সনাতন পদ্ধতিতে ৮ বিঘা জমিতে ৩৫ জন শ্রমিক লাগবে। খরচ তিনগুণ বেশি হবে।