রাঙ্গুনিয়ায় চাঞ্চল্যকর প্রবাসী ইউসুফ হত্যা মামলার চার্জ গঠন
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় চাঞ্চল্যকর প্রবাসী ইউসুফ আলী হত্যা মামলায় ১২ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে আদালত। চার্জ গঠনের পর বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন বিচারক। সোমবার চট্টগ্রামে জেলা ও দাায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভুইয়া'র আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে অভিযোগ গঠিত হয় এবং সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য আগামী ২০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়। এর মাধ্যমে বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী এসব বিষয় নিশ্চিত করেন।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এস ইউ এম নুরুল ইসলাম বলেন, গত ২ আগস্ট আদালতে ছয় আসামীর পক্ষে ডিসচার্জ পিটিশন (অব্যাহতির আবেদন) দেয়া হয়েছিলো এবং একইদিন শুনানি করা হয়। এরপর সোমবার (১৪ আগস্ট) সকালের দিকে বিচারক আজিজ আহমেদ ভুইয়া'র আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়। বিচারক এ সময় পিটিশন নামঞ্জুর করে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। বারজন আসামির মধ্যে ছয়জনের পক্ষে যে ডিসচার্জ পিটিশন (অব্যাহতির আবেদন) দেওয়া হয়েছিলো আদালতে সেটি নামঞ্জুর হয়। এসময় জামিনপ্রাপ্ত ছয়জন আসামী বাদী ও স্বাক্ষীদের ভয়ভীতি ও হুমকি দেবে না মর্মে অঙ্গীকার করেন। এরপর আগামী ২০ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
এদিকে স্বামী খুন হওয়ার দীর্ঘ দেড় বছরে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন প্রবাসী ইউসুফ আলীর স্ত্রী শাহিনুর আক্তার। অন্যদিকে আসামীদের অব্যাহত হুমকি এবং ভয়ভীতির কারণে তিনি শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হন। তবে একটু দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছেন প্রবাসী ইউসুফ আলীর স্ত্রী শাহিনুর আক্তার।
জানা যায়, নৃশংস এই হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত এই ১৩ আসামিরা হলেন আজগর আলী (৫২), টিপু (২৮), মামুন (৩৩), আলী আকবর (৪৩), মাহবুবুল আলম (৩৩), সাগর খান (২২), মোমিন (২০), আলমগীর (৪০), আয়ুব আলী খান (৫৪), মোহসিনুল হক (৫৫), আবু তালেব (৩৮), আবু বক্কর (৫১) ও নেজাম উদ্দিন নাজু (১৭)। তাদের মধ্যে প্রধান আসামিসহ দুই জন জেলে, ছয়জন জামিনে এবং বাকিরা পলাতক রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে এম আবু তৈয়ব তালুকদার দ্বিতীয়বারের মতো সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আজগর আলী এতে ক্ষিপ্ত হন। তার নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ দল প্রথমে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর হৃদয় নামের এক সমর্থক এবং পরদিন ইউপি সদস্য তৈয়ব তালুকদারের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেন। এরপর ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাঙ্গুনিয়ার রানীরহাট থেকে রাজানগরের বগাবিলী গ্রামে যাওয়ার পথে তৈয়বের বড় ভাই প্রবাসী ইউসুফের ওপর ফের হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। এ ঘটনায় ইউসুফ আলীর স্ত্রী শাহিনুর আক্তার বাদী হয়ে নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আজগর আলীসহ ১২ জনের নামে এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।