পুলিশের অনবদ্য অবদানে ৭০ বছরের কষ্টের অবসান, সুখের নীড়ে বৃদ্ধা কুলছুমা
কাজী আয়েশা ফারজানা, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: বিয়ের পর থেকে কখনো এখানে কখনো ওখানে স্বামী সন্তান নিয়ে দিন কাটিয়েছন। ভিটে মাটি হারা আশ্রয়হীনতা আর দারিদ্রতার যন্ত্রণায় জীবনের অনেক গুলো বছর কেটে গেছে। ওই আশ্রয় ও ভূমিহীন বৃদ্ধা পেয়েছেন পুলিশের দেয়া উপহারের ঘর। শেষ জীবনে এসে এই মাথা গোজার ঠাই পেয়ে ৭০ বছরের কষ্টের অবসান ঘটায় বৃদ্ধার সুখের যেন সীমা নেই। বদলে গেছে বৃদ্ধার জীবন যাত্রা। চোখে মুখে উচ্ছাসের ঝলক, বাংলাদেশ পুলিশের এই উদ্যোগ মাইল ফলক হয়ে থাকবে এই জনপদের মানুষের।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর বৃদ্ধা কুলছুমা বেগম(৭০)। স্বামী মারা গেছেন সাত বছর আগে। এক মেয়ে ও দুই ছেলে তার। অভাব অনটনের সংসারে ছেলে মেয়ের পড়া লেখা করাতে পারেননি। দিনমজুর স্বামী সোলইমান ছিলেন ভূমিহীন। ভিটেমাটিহারা সোলাইমান কখনো ভাড়া ঘরে কখনো অন্যের আশ্রয়ে অর্ধাহারে অনাহারে মানুষের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য সহ্য করে জীবনের শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন। বৃদ্ধা কুলছুমা স্বামী হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে জীবনের শেষ বয়সে যখন অন্ধকার দেখছিলেন ঠিক তখনি আলোর মশাল হাতে নিয়ে হাজির হন পুলিশ।
মজিববর্ষের অঙ্গিকারে পুলিশের উদ্যোগ পাল্টে দিয়েছে তার জীবন। এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি।
বাংলাদেশ পুলিশের মহা পুলিশ পরিদর্শক আইজিপি ড. বেনজির আহমেদের উদ্যোগে মজিববর্ষে ভূমিহীন হতদরিদ্রদের গৃহনির্মাণ কর্মসূচীর আওতায় চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর ৭০ বছর বয়সি বৃদ্ধা কুলছুমা পেয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের উপহারের নান্দনিক এক ঘর।
সারাদেশে এ ঘর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইজিপি ড.বেনজির আহমেদ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল বিকেলে চট্টগ্রামের জেলা পুলিশ সুপার মো. রশিদুল হক পিপিএমের নির্দেশে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) মো.তারিক রহমান ঘরের সার্বিক কাজ পরিদর্শণ করেন। এ সময় তার সাথে বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল করিম,পুলিশ পরিদর্শক মো. সাইফুলসহ থানার সকল কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের পক্ষ থেকে ১ গন্ডা জায়গার উপর ঘর নির্মাণ করার কথা থাকলেও বোয়ালখালী থানা পুলিশ নিজেদের অর্থায়নে দুই গন্ডা জায়গা কিনে তার উপ একতলা বাড়িটি নির্মাণ করে দেন। সরকারিভাবে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ব্যয় নির্মাণ ধরা হলেও এখানে প্রায় জায়গা কেনাসহ ১০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, স্পেন প্রযুক্তিতে তৈরী সাদা-লাল ও অপ-হোয়াইট রংয়ের একতলা ঘরটি সবার নজর কাড়ছে। এ ঘরে রয়েছে,বেডরুম,ড্রইংরুম,ডায়নিংরুম,রান্নাঘর ও উন্নতমানের টয়লেট ও গোসলখানা। ঘরের প্রতি পরতে পরতে আধুনিকতার ছোঁয়া। বাইরে বারান্দা। দু’পাশে দুটি ফুলের বাগান। বাগানে শোভা পাচ্ছে বাহারি নানা জাতের রংয়ের ফুল। সামনে পুকুর,ধান ক্ষেত সবুজ বৃক্ষের হাতছানি।
বারান্দায় লাল রংয়ের টাইলস করা। ঘরের ভেতরের দামি ফার্ণিচারও পুলিশের পক্ষ থেকে কিনে দেয়া। উপজেলার পশ্চিম শাকপুরা সিপাহীঘোনা এলাকায় পুলিশের এ উপহারের ঘর পেয়ে হত দরিদ্র কুলছুমার চোখে মুখে উৎচ্ছাসের হাসিতে চোখের দু কোণে জল গড়িয়ে পড়ছিল । বৃদ্ধা বার বার দু’হাত তুলে প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশে জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করছিলেন।
বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টারের তদারকিতে সারা দেশে একই অবকাঠামো ও ডিজাইনে ঘরগুলো নিমার্ণ করা হলেও বোয়ালখালীর ঘরটি একটু ভিন্ন। বোয়ালখালী থানা পুলিশ দেখভালের পাশাপাশি নিজেরাও স্বেচ্ছায় শ্রম ও অর্থ দিয়ে ঘর নির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন করেন। এ মহৎ কাজে অংশগ্রহন করতে পেরে থানার ওসি আবদুল করিমসহ সংশ্লিষ্ট সকল পুলিশ কর্মকর্তা সন্তোষ প্রকাশ করেন। বোয়ালখালী ছাড়াও চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি থানায় হতদরিদ্রদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।