নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তারাও

অতীতে শুধু এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হলেও বর্তমানে প্রায় ১২ মাসই প্রশ্ন ফাঁসের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কারণ এখন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সময়ের সঙ্গে কৌশলও পাল্টাচ্ছে ওই চক্রের সদস্যরা। এছাড়া পরীক্ষা চলাকালে ডিভাইসের মাধ্যমেও উত্তর দিচ্ছে চক্র।
আবার কখনো কখনো প্রশ্ন তৈরিতে যারা যুক্ত, তাদের মাধ্যমে ফাঁস করা হচ্ছে প্রশ্ন। প্রার্থীদের প্রশ্ন না দিয়ে পরীক্ষা শুরুর আগে মুখস্থ করানো হচ্ছে উত্তর। পরামর্শ দেওয়া হয় শতভাগ প্রশ্নের উত্তর না দিতে। আর ওইসব চক্রের সাথে জড়িত রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরাও জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সম্প্রতি প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীনে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরো ৫ থেকে ৬ জনের তথ্য পেয়েছে ডিবি। গ্রেপ্তার চক্রের ১০ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে এসেছে তাদের নাম। যাদের মধ্যে আছেন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীও। এদিকে, প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ধরা পড়ার পরও প্রকাশিত হয়েছে ওই নিয়োগ পরীক্ষার ফল।
গত শুক্রবার প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নফাঁস ও উত্তর পাঠানোর অভিযোগে হল থেকে গ্রেপ্তার হন এক পরীক্ষার্থী। সেই পরীক্ষার্থী বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিন রূপা। ওই দিন বিভিন্ন জায়গায় অভিযানে গ্রেপ্তার হন প্রশ্নফাঁস চক্রের আরও ৯ সদস্য।
এবিষয়ে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল জানান, গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত সংবাদের ঢাকায় সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহবুবা নাসরীন রুপার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। তার এ কর্মকান্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এ কারনে তাকে দল থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাপস ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে দেওয়া, বাইরের রুমে ওয়ানস্টপ সমাধান কেন্দ্র বসিয়ে স্মার্ট ওয়াচ, এয়ার ডিভাইস, মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করার কাজ করে।
চক্রের সদস্যরা ইতোপূর্বে বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন, হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদফতর, সমবায় অধিদফতর, খাদ্য অধিদফতর, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা বিভিন্ন ব্যাংক এবং বিকাশের মাধ্যমে ও নগদে হাতিয়ে নিয়েছে।
ডিবির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলছে, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও ৫ থেকে ৬ জনের এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। তাদের মধ্যে আছেন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীও।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, প্রথমে প্রার্থী জোগাড় করতো চক্রটি। চুক্তি হতো ১৪ থেকে ২২ লাখ টাকার। পরীক্ষার দিন ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নফাঁস করা হতো হল থেকে। পরে বাইরে সমাধান করে পরীক্ষার্থীদের উত্তর পাঠানো হতো স্মার্ট ওয়াচ, ইয়ার ডিভাইস ও মোবাইল ফোনে।
ডিবি বলছে, চক্রটি ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ থেকে ছয়টি সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে করেছে। এদিকে, প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও বাতিল হয়নি অডিটর নিয়োগ পরীক্ষা। রোববার প্রকাশিত হয়েছে এমসিকিউ পরীক্ষার ফল।