মোঃএনামুল হক, পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি: ‘পুলিশে সেবার ব্রর্তে নিয়ে চাকুরি’ এই স্লেগানে শতভাগ মেধা যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে পঞ্চগড়ে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদের নিয়োগ পেয়েছেন ২৫ জন তরুণ-তরুণী। এই চাকরি পেতে একজনের খরচ হয়েছে মাত্র ১২০ টাকা।
কোন প্রকার হয়রানি, সুপারিশ, তদবির এবং ঘুষ ছাড়া পুলিশের গর্বিত সদস্য হতে পেরে খুশিতে আত্মহারা হতদরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারে এসব তরুণ- তরুণীরা।
১৩ মার্চ রাতে পঞ্চগড় পুলিশ লাইন ড্রিল শেডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা ট্রেইনি পুলিশ কনস্টেবল পদে নিযোগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন। এতে ২১ জন তরুণ এবং চারজন তরুণ প্রথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স কর্তৃক মনোনীত মোহাম্মদ মনজুর আহমেদ, ১২ এপিবিএন এর পুলিশ সুপার মো. জাহিদ হোসেন, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাজস্ব বাস্তবায়ন) মো. মমিনুল করিম, দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এস.এম. শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কনক কুমার দাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আমিরুল্লাহ আমিরসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীগণ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
নিজ যোগ্যতায় ও মেধায় চাকুরির ফলাফল পাওয়া মাত্রই ২৫ জন তরুণ-তরুণী আনন্দে বিমোহিত হয়। এসময় পুলিশের ড্রিল শেড মুহূর্তের মধ্যে পরিণত হয় আনন্দ ও কান্নার মিলনমেলায় । এসময় অনেকের নাম ঘোষণার পরপরই অকেকে অঝোরে কাঁদতে থাকেন, অনেকেই চাকরি পাওয়ায় আনন্দ উল্লাস করেন। তাদের মধ্যে অপু হায়দার, শাকিবা জান্নাত শাম্মী ও শাপলাসহ বাকিরা । বিনা খরচে চাকরি পেয়ে অনেক খুশি তারা।
এ বিষয়ে বাবা হারা মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন করা কলেজ ছাত্র অপু হায়দার বলেন, আমার বাবা নেই। গত চার বছর ধরে তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন করে পরিবার চালিয়ে ও নিজের লেখাপড়া করে আসছি। আজকে আমি পুলিশের চাকরি পেয়ে অনেক আনন্দিত। আমি সবার কাছে দোয়া চাই। আমিও যেন মানুষের সেবা করতে পারি পুলিশের চাকরি করে।
মাত্র ১২০ টাকায় চাকরি পেয়ে আরেক কলেজ ছাত্র আবিদ হাসান বলেন,আমি গরিব ঘরের ছেলে। আমার বাবা একজন সাধারণ কৃষক। অনেক আশা করে বাংলাদেশ পুলিশের আবেদন করে ছিলাম। অবশেষে আমার পুলিশের চাকরিটা হয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো, আমার নাম প্রথম দিকে ডাকলেও আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি, পরে সংখ্যা না মিলায় সবাইকে আবারো ডাকা হয়। পরে আমার নাম আমি জানতে পারি। তাই সবার চেয়ে আমার আনন্দটা অন্যরকম।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, নিজের যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে আজকের চাকরি পেল ২৫ জন তরুণ তরুণী। যারা আজকে নিয়োগ পেয়েছেন তারা সবাই শতভাগ নিজেদের যোগ্যতায় ও মেধায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এরা সবাই যোগ্য, দক্ষ, মেধাবী। এতে তাদের কোন যোগাযোগ, লবিং ও ঘুষ বিনিময়, তদবির করতে হয়নি। তাদের মাত্র আবেদন করতে যে খরচ হয়েছে ১২০ টাকা। সেটিই তাদের খরচ। আশা করছি আজকে যারা পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশের নতুন সদস্য হলেন তারা সবাই দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। তাদের জন্য রইল অনেক শুভকামনা।
এ সময় পঞ্চগড় জেলার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল ২৫ জনের শূন্য পদের বিপরীতে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং শেষে ১১২৪ জন প্রার্থী শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা শেষে ২৩৮ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং লিখিত পরীক্ষায় ৯৯ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে চূড়ান্তভাবে ২৫ জনকে (২১জন ছেলে ও ০৪ জন মেয়ে) মনোনীত করে পঞ্চগড় জেলা টিআরসি-২০২৪ নিয়োগ বোর্ড। এতে অপেক্ষমান রাখা হয়েছে আরো ২ ছেলে ও এক মেয়েকে। ২৫ জনের মধ্যে সাধারণ কোটা ১১ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৭ জন, পোষ্য কোটায় ১ জন,আনসার কোটায় ১ জন ও এতিম কোটায় ১ জন নিয়োগ পেয়েছেন। নারী সাধারণ কোটায় ৪ জন।