তুরস্কের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক তলানিতে, নেপথ্যে কী
শিখ নেতা হারদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কানাডার সঙ্গে ভারতের চরম উত্তেজনা চলছে। দেশ দুইটির সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। সহসাই দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে যে বরফ গলছে না- তা প্রায় নিশ্চিত। অন্যদিকে তুরস্কের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্কে নিম্নগামী।খবর বিবিসির
দিল্লিতে চলতি মাসের শুরুর দিকে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যে বিশ্বনেতারা ভারতে আসেন তাদের মধ্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও ছিলেন। সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়।
এরদোয়ান ‘দক্ষিণ এশিয়াতে তুরস্কের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার’ ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর ওপরও জোর দেন। দিল্লিতে এরদোয়ান এবং মোদি যখন করমর্দন করে আলোকচিত্রীদের সামনে ‘পোজ’ দিচ্ছেন এর ২৪ ঘণ্টা আগে দিল্লিতে ঘোষিত হয় ‘ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ’ অর্থনৈতিক করিডর বা আইএমইসি-র রূপরেখা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, নরেন্দ্র মোদি, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং সেই সঙ্গে আমিরাত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি ছিল তাতে।
আরও পড়ুন: ভিসা নিষেধাজ্ঞায় সবার উদ্বেগের কিছু নেই
সেখানে জানানো হয়, নৌপথে ভারতের পশ্চিম উপকূল থেকে শুরু করে তারপর রেলে আমিরাত, সৌদি, জর্ডান এবং ইসরায়েল হয়ে আবার সমুদ্রপথে এই করিডর কীভাবে ইউরোপের বন্দরে গিয়ে ভিড়বে। এই করিডরের ঘোষণায় সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট হয়েছিল যেসব দেশ, তার অন্যতম তুরস্ক।
তুরস্ক থেকে যেসব সাংবাদিক প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হয়ে দিল্লিতে আসেন, পরদিন তাদেরকে এরদোয়ান জানিয়ে দেন, তুরস্ককে পাশ কাটিয়ে এরকম কোনো করিডর তৈরির চেষ্টা আমরা কিছুতেই মেনে নেব না।
এরপর দেশে ফিরে কয়েকদিনের মধ্যেই এরদোয়ান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে যান এবং সেখানে বিগত কয়েক বছরের মতো আবারও কাশ্মির ইস্যুতে ভারতকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন।
ভারতও যথারীতি এরদোয়ানের বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে জানায়, কাশ্মির প্রশ্নে তিনি স্রেফ পাকিস্তানের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি করছেন– যাকে গুরুত্ব দেওয়ারই দরকার নেই।
এরই মধ্যে দিল্লির ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকা রিপোর্ট করে, দিল্লি সফরের সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট শহরের বিখ্যাত জামা মসজিদে গিয়ে শাহী ইমামের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন– কিন্তু ভারত সরকার তার সেই অনুরোধ খারিজ করে দেয়।
ফলে তুরস্ক ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের শীতলতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে বলে কিছুদিন আগেও যে ধারণা তৈরি হচ্ছিল তা ধূলিসাৎ হতেও সময় লাগেনি। বস্তুত এই মুহূর্তে দু’দেশের সম্পর্ক যে তলানিতে ঠেকেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইসরায়েল, গ্রীস, সাইপ্রাস বা আর্মেনিয়ার মতো তুরস্কের যে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আঙ্কারার সম্পর্ক খুব খারাপ– ঠিক তাদের সঙ্গেই ভারতের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা এ সঙ্কটকে আরও জটিল করে তুলেছে।