ডাম্পিংয়ে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ, সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব
ব্যুরো চীফ, কুমিল্লা: কুমিল্লা কাস্টমস গোডাউনে জব্দকৃত মালামাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে খোলা আকাশের নিচে পরে আছে বছরের পর বছর। এতে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার জাতীয় সম্পদ আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। জব্দকৃত গাড়ির উপর গজিয়েছে বিভিন্ন গাছ গাছালি।
জানা যায়, নিলাম কাস্টমসের মুল কাজ হচ্ছে বৈধ ব্যবসায় সহজীকরণ করা। কেউ কেউ এই সহজীকরণের অপব্যবহার করে অবৈধ পণ্য পরিবহনের সাথে জড়িত থাকে। সেই পরিবহন গুলি জব্দ করে গোডাউনে প্রেরণ করা হয়। তারপর অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হয় কুমিল্লা কাস্টম গোডাউনে জব্দ করা কোটি টাকার জাতীয় সম্পদ মোটরযানসহ দামি মালামাল। মামলার নিষ্পত্তি, আইনি জটিলতা, দীর্ঘ সূত্রিতার কারনে কাস্টমস গোডাউন চত্ত্বরে শতাধিক বাস-ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহন বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে অরক্ষিত ভাবে পরে রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা রানীর বাজারস্থ নুনাবাদ কাস্টম গোডাউনে প্রায় শতাধিক মোটরযান খোলা আকাশের নিচে রোদ, বৃষ্টি, ধুলা-বালিতে বছর কি বছর অরক্ষিত ভাবে পরে আছে। ইতিমধ্যে এ সকল যানবাহনের উপর জন্মেছে বিভিন্ন আগাছা। আর নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার জাতীয় সম্পদ। এ সমস্ত যান ও মালামাল অনিরাপদে রাখায় মুল্যবান যন্ত্রপাতি ঝংকার ধরে এবং চুরি হয়ে যায়। সচল মটরযানগুলো বর্তমানে সম্পূর্ণ অচল যা ভাংগারি হিসেবেও তুলনা করা যায় না। জব্দকৃত মোটরযান গুলোর মালিক যোগাযোগ না করায় দীর্ঘদিন পড়ে থেকে যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। অবৈধ মালামাল বহনে এবং সঠিক কাগজ পত্র না থাকায় এ সকল গাড়ি জব্দ করা হয়। মালিকরা মামলা নিষ্পত্তি না করায় এ সকল গাড়িগুলো বছরের পর বছর ডাম্পিংয়ে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, আইনের হাত থেকে নিরাপদে থাকার জন্যই গাড়ির মালিকরা গাড়ি ফেরত নিতে আসেনা। এই ভাবে পড়ে থাকলে অনেক দামি দামি গাড়ি মাটির সাথে মিশে যাবে। সরকার যদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে, তবেই সম্ভব কোটি কোটি টাকার জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা। না হয় আইনি প্রক্রিয়ায় এনে মোটরযানসহ বিভিন্ন মালামালগুলো নিলামে বিক্রি করে দেওয়া। এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী জানায়, এখানে টেন্ডার হয় তবে সেটা হচ্ছে নাম মাত্র। কাস্টমসের লোকেরা টেন্ডারের বিষয়টা ঐ রকম ভাবে প্রচারণা করে না। তারা শুধু রানীর বাজার আর বাগিচাগাঁও মোড় একটু মাইকিং করে আর কোন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় কিনা সেটাও জানি না, দেখি না। তারা টেন্ডারের আগের দিন বিকালে নোটিশ দেয় আবার রাতের মধ্যে তা নামিয়ে ফেলে। কাস্টমসের লোকেরা সঠিক ভাবে প্রচারণা করলে এত যানবাহন নষ্ট হতো না। সরকারও অনেক লাভবান হতো।
অন্য একজন ব্যবসায়ী জানায়, টেন্ডার হয় সেটা আগের দিন জানি। আর টেন্ডারগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিলাম হয়ে যায়। যার কারণে সরকারও তার সঠিক মূল্য পাচ্ছে না।
কুমিল্লা কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার আবু হানিফ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, আমি কুমিল্লাতে আসার আগে পাঁচ বছরেও একটা নিলাম হয়নি। আমি আসার পরে এক বছরে ৩টি নিলাম এবং পচনশীল পন্যসহ বিভিন্ন মালামাল নিলাম হয়েছে ২০টি। এখানে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট থাকতে পারে যার কারণে বাহিরের লোকজন নিলামে অংশগ্রহণ করতে আসে না। পুরা শহরে মাইকিং করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তাই আমরা ঐরকম ভাবে প্রচারণা করি না। তবে যেটুকু করি নিলামে যথেষ্ট পরিমান লোক থাকে।