যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়াত্ব সুরক্ষার জন্য চীনা সংস্থার আবেদন
চীনে আবাসন ব্যবসায় সংকটের মধ্যে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এভারগ্র্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। এ সংকট থেকে উত্তরণে বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কের একটি আদালতে সুরক্ষার আবেদন করে এই চীনা কোম্পানি।
মার্কিন আইনে দেউলিয়া হওয়া থেকে সুরক্ষা পেলে ঋণে জর্জরিত এভারগ্র্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সম্পদ রক্ষা করতে পারবে। দুর্দশা থেকে উদ্ধার পেতে আরো কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এভারগ্র্যান্ড।
চীনা এই রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ২০২১ সালে ঋণ খেলাপি হলে বিশ্বজুড়ে আর্থিক বাজারে তার ধাক্কা লাগে। তখন থেকেই ঋণ পুনর্গঠনের জন্য আলোচনা চালিয়ে আসছে এভারগ্র্যান্ড। এভারগ্র্যান্ডের ঋণের পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
আরও পড়ুন:বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত
আবাসন খাতে বিশ্বে আর কোনো কোম্পানির এত বেশি ঋণ নেই। এভারগ্র্যান্ড গত মাসে জানিয়েছে, গত দুই বছরে সব মিলিয়ে ৮০ বিলিয়ন ডলার লোকসান হয়েছে তাদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২২ সালের মার্চ থেকে এ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত রাখা হয়েছে।
১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এভারগ্র্যান্ড চীনের ২৮০টি শহরে প্রায় ১ হাজার আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করেছে? দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়তে থাকায় এভারগ্র্যান্ডের মতো কোম্পানিগুলোর ব্যবসাও বাড়ছিল বেশ। এভাবে আবাসন ব্যবসা চীনের প্রবৃদ্ধির অন্যতম বড় চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে? ২০২১ সালে দেশটির মোট আর্থিক লেনদেনের প্রায় ২৯ শতাংশ এই খাতেই হতো।
ক্রেতাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা আর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকায় ফ্ল্যাট তৈরি করত এভারগ্র্যান্ডের মতো কোম্পানিগুলো। কিন্তু চীন ২০২০ সালে আবাসন খাতের ঋণের জন্য নতুন এক আইন করার পর পরিস্থিতি বদলে যায়।
‘থ্রি রেড লাইনস’ নামের ঐ আইনে প্রপার্টি ডেভেলপারদের ঋণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। ফলে আগের মতো চাইলেই ঋণ পাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
আর তাতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে এভারগ্র্যান্ডের মতো কোম্পানিগুলো, ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে যাওয়ায় তাদের বড় প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। চীনের আরেক বড় রিয়েল এস্টেট কোম্পানি কান্ট্রি গার্ডেন গত সপ্তাহে জানিয়েছে, বছরের প্রথম ছয় মাসে তাদের লোকসানের পরিমাণ সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
অর্থনীতির গবেষণা সংস্থা মুডি'স অ্যানালিটিকসের স্টিভেন কোচরান বলছেন, এই সংকট থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হলো, অসমাপ্ত আবাসন প্রকল্পগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করা। কারণ তাতে অর্থের লেনদেন কিছুটা হলেও বজায় থাকবে।