চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যু, আশঙ্কাজনক নবজাতক এনআইসিইউতে
ব্যুরো চীফ, কুমিল্লাঃ কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা নাভানা হাসপাতালে আবারো ভুল চিকিৎসার কারণে ঢাকাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং নবজাতক শিশুটি আশংঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে কুমিল্লা মুন হাসপাতালের এনআইসিইউতে। এ অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা।
নিহত রোগীর নাম সীমা আক্তার। সে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার হরিমঙ্গল গ্রামের মো. শাহিন মিয়ার স্ত্রী।
রোগীর স্বজনদের মাধ্যমে জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর রোববার দুপুরে বুড়িচং পাচোড়া এলাকার গ্রাম্য ডাক্তার সোলেমান তাদের কে কুমিল্লা নাভানা হাসপাতালে নিয়ে আসে। আসার সময় এবং পরবর্তীতে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ্ ছিলো। সে নিজে হেঁটে ওটিতে যায়। ওটিতে অপারেশন করায় গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. উম্মে হাবিবা। তার ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। পরে রোগীকে নাভানা হাসপাতাল থেকে মুনে রেফার করে।
তারা আরো জানায়, মুনে নেওয়ার পর রোগীর অবস্থা আরো অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে আবারো অপরারেশন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে ডা. লিরা তাকে অপারেশন করলে রোগীর ব্লিডিং ৯০ ভাগ বন্ধ হয়। কিন্তু এর মধ্যে রোগী প্রায় রক্তশূন্য হয়ে যায়। পরে রোগীর অবস্থা আরো বেগতিক হলে তাকে ঢাকা আশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে আইসিওতে রাখা হয়। সেখানে তাকে ক্লিনিক্যাল ডেথ ঘোষণা করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রোগীর স্বজনরা। এবং নবজাতক শিশুকে আশংঙ্কাজনক অবস্থায় বর্তমানে কুমিল্লা মুন হাসপাতালের এনআইসিইউতে রাখা হয়েছে।
নিহতের বোন জামাই মাসুম বলেন, আমরা কুমিল্লাতে এসে নাভানা হাসপাতাল ও ডাক্তারদের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করবো এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে নেই কোন ডাক্তার। ডা. উম্মে হাবিবা প্রতিদিন একটা থেকে দেড়টার মধ্যে চেম্বারে আসেন। কিন্তু গতকাল বিকাল ৩টায়ও সে চেম্বারে আসেনি। অনেক বেডে দেখা যায় নোংড়া ব্যবস্থাপনা। হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি প্রায় ১ বছর। এসময় সেবার মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেন অনেক রোগী।
এ বিষয়ে জানতে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. উম্মে হাবিবাকে পরিচালক মো.আবদুল আউয়াল সরকারের সামনে মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন এবং সাথে সাথে মোবাইল বন্ধ করে দেন। ফলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের এনেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. মুহিদ বলেন, আমি এনেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ। আমার কাজ রোগী অজ্ঞান করা। আমি যতটুকু জানি রোগীর স্বজনরা আল্ট্রার রিপোর্ট হাইড(গোপন) করেছে। তাদেরকে রক্ত রিজার্ভ রাখার কথা বলার পরেও এক ব্যাগ রক্ত রাখতে পারেনি। সিজার করার পরে যখন ব্লিডিং হচ্ছিল তখন রোগীকে মুন হাসাপাতালে রেফার করা হয়।
হাসপাতালের পরিচালক মো. আবদুল আউয়াল সরকার বলেন, আমাদের কাজ রোগীর সেবা দেওয়া, রোগীকে মেরে ফেলা নয়। এখানে অপারেশন করেছে ডাক্তার। ডাক্তার যদি কোন ভুল করে থাকে তাহলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. নাসিমা আক্তারকে ফোন দিলে তিনি বলেন এ বিষয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জনকে ফোন দিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা.নাজমুল আলম বলেন, আমি সাংবাদিকের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। সাংবাদিক কোন তথ্য দিলে আমি সেটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে দেখি। আমরা আমাদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী সামনে আগাবো।