কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ কেন্দ্র যেন নকলের অভয়ারণ্য, বহিষ্কার ১৫ শিক্ষার্থী
ব্যুরো চীফ, কুমিল্লা : এলএলবি ফাইনাল পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে ১৫ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্র থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
কেন্দ্র সচিব জানিয়েছেন, ভিক্টোরিয়া কলেজ নকল মুক্ত। নকল করতে হলে কেন্দ্র স্থানান্তর করতে হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার ছিলো এলএলবি ফাইনাল পরীক্ষা। ভিক্টোরিয়া কলেজ ডিগ্রি শাখার পরীক্ষা ভবনে ছিলো বঙ্গবন্ধু ল কলেজ ও কুমিল্লা ল কলেজের কেন্দ্র। অধিকাংশ পরীক্ষার্থী মোবাইল ফোন নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করেছেন। অনেকের সাথে ছিলো আইন বিষয়ক বইয়ের বিভিন্ন পাতা, ছেড়া টুকরা। কয়েকজন পুরো গাইড নিয়ে পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশ করেছেন। পরীক্ষা ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার চারটি টয়লেটে দেখা গেছে বইয়ের পাতা, ছেড়া অংশ ও হাতের লেখা চিরকুট। ভবনের পেছনে টয়লেটের সেপটি ট্যাংকে অবস্থান করতে দেখা গেছে পরীক্ষার্থীদের বন্ধু ও স্বজনদের।
পরীক্ষা শেষ হয়েছে সাড়ে ১২টায়। বেলা একটায় বহিষ্কৃত এক নারী পরীক্ষার্থীকে দেখা যায় পরীক্ষা ভবনের বারান্দায় উপাধ্যক্ষের পা ধরে আছেন। কান্না করছেন আরো দু'জন নারী পরীক্ষার্থী।
নাম না প্রকাশ করে কুমিল্লা ল কলেজের বহিষ্কৃত একজন পুরুষ শিক্ষার্থী বলেন, এলএলবি পরীক্ষায় দেখাদেখি করে সবাই লেখে। এটা সারাদেশে সব কেন্দ্রে চলে। ভিক্টোরিয়া ব্যতিক্রম। নকল বন্ধ করলে আপনারা সারাদেশে বন্ধ করেন। আমাদের জীবন ধ্বংস করবেন না।
কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও ভিক্টোরিয়া কলেজের সংস্কৃত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জীতেন্দ্রনাথ তরফদার জানান, এ কেন্দ্রে দু'টি প্রতিষ্ঠানের ২৯১জন পরীক্ষার্থীর আসন রয়েছে। আজ ১৮৫ জন পরীক্ষায় উপস্থিত হয়েছে। হাতেনাতে নকলসহ আমরা ১৫ জনকে ধরেছি। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু ল কলেজের চারজন ও কুমিল্লা ল কলেজের ১১জন শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। পরীক্ষার হলে যার সাথে যে কাগজ পেয়েছি, তা মূল কাগজের সাথে রেখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
ভিক্টোরিয়া কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মৃনাল কান্তি গোস্বামী বলেন, গত দু'টি শুক্রবার আমরা পরীক্ষার্থীদের বলেছি, এটা ভিক্টোরিয়া কলেজ। নকল করা যাবে না। তারা আমাদের কথা রাখেনি। প্রতিটা টয়লেটে নকল। পরীক্ষার কন্ট্রোল রুমের পাশে শিক্ষকদের টয়লেট। শিক্ষকদের টয়লেটে বসে বসে তারা নকল করে। ১৫জন শিক্ষার্থীদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। অসদুপায় অবলম্বনের সময় যার কাছে যে কাগজ পাওয়া গেছে, তাদের প্রবেশপত্র, মূল কাগজের সাথে স্টাপ্লার করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র প্রধান প্রফেসর ড. আবু জাফর খান বলেন, ভিক্টোরিয়া কলেজ নকল মুক্ত। নকল করতে হলে কেন্দ্র স্থানান্তর করতে হবে। ভিক্টোরিয়ার ঐতিহ্যের সাথে নকল চলে না। পরের পরীক্ষায় আমরা আরো কঠোর হবো।