গাজীপুরে জন্মের ৫৬ ঘণ্টার মধ্যেই ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ
গাজীপুর প্রতিনিধি : জন্মের ৫৬ ঘণ্টার মধ্যেই চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফলতিতে এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গাজীপুর মহানগরের শিববাড়ির একটি গলিতে অননুমোদিতভাবে গড়ে তোলা এক প্রাইভেট হাসপাতালে মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে।
নবজাতকের বাবা আনিসুর রহমান জানান, তার স্ত্রী জমিলা বেগমের প্রসবের সম্ভাব্য নির্ধারিত তারিখ ছিল আগামী ১০ ডিসেম্বর। এরই মধ্যে গত শনিবার রাতে জমিলা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত স্থানীয় শিববাড়ি মোড়ে অবস্থিত গাজীপুর আধুনিক হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আনা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তমা কর্মকার শিববাড়ির একটি গলিতে অবস্থিত এসকিউআর মেডিকেল সার্ভিসেস এন্ড হসপিটাল লিঃ নামের হাসপাতালে নিয়ে দ্রুত সিজার করেন। সিজারে জমিলা ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। অস্ত্রোপচার শেষে ডা. তমা কর্মকার ব্যবস্থাপত্র লিখে চলে যান।
এরপর ডা. তমা আর হাসপাতালে আসেননি, নবজাতকেরও কোন খবর নেননি। নবজাতক বা শিশুরোগে অভিজ্ঞ কোন ডাক্তারও শিশুটির খবর নেয়নি। এরই মধ্যে সোমবার রাতে শিশুটি প্রচন্ড কান্না শুরু করলে কর্তব্যরত ডাক্তার ও স্টাফদের জানানো হয়। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। মঙ্গলবার সকালে শিশুটির শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ডিউটি ডাক্তার দ্রুত শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে এ ঘটনার পর মঙ্গলবার দুপুরে রাজবাড়ি রোডস্থ শিববাড়ির একটি গলিতে নির্মাণাধীন ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় কথিত ওই হাসপাতালে সরজমিনে গিয়ে একজন ডাক্তার, একজন নার্স ও একজন নার্স কাম ম্যানেজার ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। এবছর সদ্য ইন্টার্নি সম্পন্ন করা ওই ডাক্তার আইনুল ইসলাম বলেন, আমি সকালে ডিউটিতে এসে ওই নবজাতকের শ্বাসকষ্ট দেখে তাজউদ্দিনে রেফার করি। এরপর সেখানে নেয়ার পর শিশুটি মারা যায়। আমাদের এখানে তার মৃত্যু হয়নি। হাসপাতালটির অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালের মালিক বলতে পারবেন। তবে এটি দশ শয্যার হাসপাতাল বলে তার দাবি।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ আজমি তুহিনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সিভিল সার্জনের অফিস থেকে সংগৃহীত বৈধ ও অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামের তালিকার কোনটিতেই ওই হাসপাতালের নাম পাওয়া যায়নি। প্রসূতির অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক তমা কর্মকারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনিও রিসিভ করেননি। আলোচিত প্রসূতিকে তার চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রে দেখা যায়, ডা. তমা গাইনী চিকিৎসায় ট্রেনিংরত।
এ ব্যাপারে জিএমপি সদর থানার ওসি মো. জিয়াউল ইসলাম বলেন, কথিত ওই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা। নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগ পেয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের সিভিল সার্জন খায়ের উজ জামান বলেন, আমরা অফিসিয়ালভাবে গিয়ে বলতে পারবো এটি অবৈধ হাসপাতাল, আপনারা বন্ধ করুন। তারা বন্ধ করলো, আমরা চলে আসার পর আবার চালু করলো। আমরা তো আর নিজেরা বন্ধ বা তালা দিতে পারবো না। এজন্য আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে গোটা জেলায় প্রায় দুই শত অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাঠিয়েছি। ওনারা এটি দেখবেন। যদি আমাদের সহযোগিতা লাগে আমরাও থাকবো।