'বিশ্বাস'র অবিশ্বাসে কোটি কোটি টাকা হারালেন হাজারো গ্রাহক
মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী ( কুষ্টিয়া) প্রতিনিধিঃ গেল দুই সপ্তাহ হলো হাজারো গ্রাহকের সঞ্চয় ও স্থায়ী আমানতের কোটি কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে বিশ্বাস ফাউন্ডেশন এবং বিশ্বাস সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড। টাকা ফেরত ও অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে শনিবার ( ২৫ নভেম্বর) ফাউন্ডেশের চেয়ারম্যানের আনিসুর রহমানের বাড়ি ঘেরাও করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন কয়েক শত গ্রাহক।
দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের সদরপুর এলাকায় তাঁরা কর্মসূচি পালন করেন। আনিস ওই গ্রামের মৃত ইব্রাহিম বিশ্বাসের ছেলে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আনিসুর রহমানের বাড়ির সামনের সড়কের দুইপাশে দাঁড়িয়ে আছে শত শত ভুক্তভোগীরা। তাঁরা টাকা ফেরত ও অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে শ্লোগান দিচ্ছেন।
এসময় আকবর হোসেন মন্ডল বলেন, মাসে দুই হাজার টাকা লাভের আশায় আমি দুই লাখ ৩৮ হাজার টাকা তিন বছরের জন্য জমা রাখিছিলাম বিশ্বাস ফাউন্ডেশনে। টাকা উত্তোলনের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু টাকা না দিয়ে পালিয়েছে সমিতির লোকজন।
সাহেদা খাতুন নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমার এক লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে উধাও সমিতি। এখন টাকার জন্য আমার সংসার অশান্তি হচ্ছে। আমি টাকা ফেরত চাই এবং ওদের বিচার চাই।
কালোয়া গ্রামের ভুক্তভোগী রূপালী খাতুন বলেন, ২০১৭ সালে ৫০ হাজার টাকা ডিপিএস খুলেছি এককালীন। আমার মতো কয়েক শত মানুষ ডিপিএস খুলেছে। সবার টাকাই নিয়ে পালিয়েছে বিশ্বাস ফাউন্ডেশন।
নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান খোকন জানান, প্রায় পাঁচ - সাত বছর ধরে আলাউদ্দিনগর প্রধান শাখা খুলে এনজিও ব্যবসা চালিয়ে আসছিল বিশ্বাস ফাউন্ডেশন এবং বিশ্বাস সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি লিমিটেড। তিনি জানতে বৈধভাবে চলছে সমিতির কার্যক্রম। কিন্তু সম্প্রতি কয়েক শত গ্রাহক পরিষদে অভিযোগ দিলে তিনি জানতে পেরেছেন তাঁদের কার্যক্রম অবৈধ। এরপর থেকেই কিন্তু গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু গেল দুই সপ্তাহ ধরে উধাও।
তিনি আরো জানান, প্রতারণা করে ওই ফাউন্ডেশন শুধু কুমারখালী উপজেলা থেকেই প্রায় ৪৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাঁর ভাষ্য, সারা বাংলাদেশেই বিভিন্ন নামে এনজিও খুলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিন আলাউদ্দিন নগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রধান কার্যালয় বন্ধ। সরানো হয়েছে সাইবোর্ড। কর্মকর্তা - কর্মচারীদের নাম্বারও বন্ধ থাকায় তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জহুরা খানম জানান, বিশ্বাস সমবায় সমিতির নামে নিবন্ধন আছে, কিন্তু ফাউন্ডেশনের কোনো নিবন্ধন নাই। বিশ্বাসের নামে নানা অভিযোগ থাকায় সমবায় কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রতিষ্ঠানে অডিটও করেনা। তাঁর ভাষ্য, বিশ্বাস ফাউন্ডেশন মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে।
ইউএনও বিতান কুমার মন্ডল জানান, বিশ্বাস মানুষের সাথে অবিশ্বাসের কাজ করেছে। একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।