রোকেয়া প্রেমিদের পদচারণায় উজ্জীবিত মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ
মো: শামীম আখতার, মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি: বেগম রোকেয়া ইতিহাসের অবিস্মরণীয় নাম। তিনি খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক ছিলেন। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ই ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩২ সালের একই দিনে তিনি মারা যান। এ জন্য এই দিনটিকে রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
দিবসকে ঘিরে রোকেয়া প্রেমিদের পদচারণায় উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে বেগম রোকেয়ার জন্মভিটা পায়রাবন্দ। দিবসকে ঘিরে তিন দিনব্যাপী মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মভূমি মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে নানা কর্মসূচি নিয়েছে রংপুর জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
প্রথমদিন শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টায় পায়রাবন্দে অবস্থিত বেগম রোকেয়ার ম্যুরালে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও পতাকা উত্তোলনের পর তিন দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করা হয়। এরপর দুপুরে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি সরকারি কলেজ মাঠে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন কথা সাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন লাবলু, পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ একরামুল হক, রোকেয়া পরিবারের সদস্য রনজিনা সাবের। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রংপুর সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ শাহ আলম। রোকেয়া জীবনীর উপর আলোচনা করেন বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল এবং স্বাগত বক্তব্য দেন মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহারিয়ার রহমান। আলোচনা সভায় বক্তারা বেগম রোকেয়ার বই পড়ার আহবান জানান।
এদিকে রোকেয়া দিবস ও মেলাকে ঘিরে রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র সেজেছে নতুন সাজে। নতুন রং আর আলোকসজ্জায় বেড়েছে দর্শনার্থীদের ভিড়। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রোকেয়া অনুরাগীদের রোকেয়ার ম্যুরালে ছবি তুলে মুহুর্তটাকে স্মৃতিবন্দি করতে দেখা যায়। এছাড়াও মেলা ও স্মৃতিকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের পদচারণা ভরপুর হয়ে উঠেছে রোকেয়ার বসতভিটা পায়রাবন্দ।
উল্লেখ্য, বেগম রোকেয়া রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থায় নারীর সমান অধিকারের জন্য আমৃত্যু লড়াই করেন। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্বপ্ন ছিল সমাজে নারী-পুরুষ সমান মর্যাদা আর অধিকার নিয়ে বাঁচবে। সেই স্বপ্নের কথাই তিনি লিখে গেছেন তাঁর গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধগুলোতে। নারীশিক্ষার প্রসারে কাজ করে গেছেন আমৃত্যু। মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনীসহ কালজয়ী গ্রন্থে ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও নারীর বন্দিদশার স্বরূপ উন্মোচন করেন।