জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নভেম্বরের প্রথমেই প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করবে ইসি
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তুতিমূলক সকল কাজ শেষ করতে চায় নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন,বলা যায়, আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে এবং ভালোভাবে চলছে। ইতোমধ্যে ১১ ধরনের নির্বাচনী মালামাল কেনাকাটার কার্যাদেশ হয়েছে। দুয়েকটির সরবরাহও হচ্ছে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে সবকিছু গুছিয়ে নেওয়া হবে।সর্বোচ্চ নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ প্রস্তুতিমূলক সব কাজ শেষ হবে।
তিনি বলেন,তফসিল ঘোষণার আগের কাজ ও তফসিল ঘোষণার পরের কাজগুলো সাজিয়ে একটা ‘চেকলিস্ট’ করা হচ্ছে।অন্তত অর্শতাধিক কাজ সম্ভাব্য সময় ধরে বাস্তবায়ন অগ্রগতিও কমিশনকে অবহিত করা হচ্ছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, হাতে থাকা ব্যালট বাক্সের বাইরে এবার নতুন করে অন্তত ৮০ হাজার স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স লাগছে। দেশিয় প্রতিষ্ঠান থেকে তা নেওয়া হচ্ছে। ব্যালট পেপারের জন্য নির্ধারিত প্রেস যথাসময়ে কাগজ সংগ্রহ ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়ের পর মুদ্রণের কাজ করবে।
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন,সেপ্টেম্বরের দিকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুতের কাজ শুরু হবে, ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত হবে, প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রস্তুতি চলবে। নানা ধরনের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক, আইন শৃঙ্খলবাহিনী, পযবেক্ষকদের সংস্থার বিষয়গুলো নিয়ে ধাপে ধাপে কাজ থাকবে।
তফসিল ঘোষণার পরের কাজগুলো ঘোষণা হওয়ার পর সময় ধরে এগোবো। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে রোডম্যাপ বাস্তবায়ন ও তফসিল পরবর্তী সব কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা হবে।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে ৩০০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার কথা থাকলেও তা থেকে সরে এসেছে নির্বাচন কমিশন(ইসি)।স্থানীয় ও কিছু সংসদীয় আসনের নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারে সুফল পাওয়ার পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সিসি ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছিলো ভোট আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি।
তবে চলমান অর্থ সঙ্কটে তাও বাদ দেওয়ার আভাস দিয়েছে। নির্বাচনে ইভিএম ও সিসি ক্যামেরা না থাকলেও থাকছে নির্বাচন ব্যবস্থাপনার জন্য অ্যাপ।
নির্বাচন ব্যবস্থাপনার জন্য অ্যাপ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো আনিছুর রহমান বলেছেন,দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আ্যাপসের কার্যক্রম শুরু হবে। নভেম্বরে এটা আমরা চালু করবো।এছাড়া এটি ব্যবহার করে গুগল ম্যাপেও ভোটার তার ভোটকেন্দ্র দেখতে পারবে।
নির্বাচনি অ্যাপসে কী থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,মূলত টোটাল ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হবে ওটা। নমিনেশন সাবমিট করা যাবে, এনআইডি নম্বর দিলে অনেক বিষয় অটো পুরণ হয়ে যাবে। ডকুমেন্ট স্ক্যান করে দিতে হবে।
নির্বাচনি কেন্দ্রগুলোর নামের তালিকা, ছবি থাকবে। কে কোথায় কোন কেন্দ্রে ভোট দিতে যাবে। এনআইডি নম্বর দিয়ে অ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এতে গুগল ম্যাপেও ভোটার তার ভোটকেন্দ্র দেখতে পারবে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নামের তালিকা থাকবে। দুই ঘণ্টার অন্তর অন্তর ভোট পড়ার হার জানানো হবে। ১০টা, ১২টা, ২ট ও বিকেল ৪টায় আপডেট থাকবে।নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ফলাফল আমরা অ্যাপসে কেন্দ্রভিত্তিক দেখতে পারবো। বেসরকারি ফলাফলটা দেখা যাবে।
গত ৩০ জুলাই সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনের বিষয়ে বলেন,ভোট ডিসেম্বরের লাস্ট উইক অথবা জানুয়ারির ফার্স্ট উইক। ওই জিনিসটাই গুরুত্বপূর্ণ। …তফসিল কবে হতে পারে সে সিদ্ধান্ত কমিশন সভায় হবে। সেটা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও হতে পারে। সাধারণত ৫০ দিন, ৬০ দিন আগে তফসিল হয়।
এর আগে নির্বাচন কমিশনার মো.আলমগীর বলেছেন,আমারা সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করার শপথ নিয়েছি। আমাদের কাজ এইটুকুই যে ভোটার তালিকা করবো, দলের নিবন্ধন দেবো আর যখন যে নির্বাচনের সময় আসবে যথা সময়ে সে নির্বাচনগুলো করবো।
নির্বাচনকালীন সরকারে ইসির কাজ কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন,সরকার কেমন হবে সেটা দেখা তো আমাদের বিষয় না। কী হবে না হবে সংবিধানে বলা আছে। আমাদের কী করতে হবে সেটাও সংবিধানে বলা আছে।কী ধরণের সরকার থাকবে সেটা রাজনৈতিক বিষয়। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলা নেই।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, প্রথম সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগে ৬০ দিন, দ্বিতীয় ৫৪ দিন, তৃতীয় ৪৭ দিন, ৪র্থ ৬৯ দিন পঞ্চম ৭৮ দিন, ষষ্ঠ ৪৭ দিন, সপ্তম ৪৭ দিন, অষ্টম ৪২ দিন, নবম সংসদ নির্বাচন ৪৭ দিন, দশম সংসদ নির্বাচনে ৪২ দিন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪৬ সময় হাতে রেখে তফসিল ঘোষণা করেছিল কমিশন।
নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথা অনুযায়ী, ভোটের তারিখের আগে ৪০-৪৫ দিন সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহারের সময় ও প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারের জন্য সময় রাখা হয়।
প্রচারণার জন্যে সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ, মনোনয়নপত্র জমায় ১০-১৫ দিন, বাছাই ৪ দিন, আপিল নিষ্পত্তি ৪-৭ দিন, প্রত্যাহারের সময় ৭ দিন সময়ও দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনার পর তফসিল চূড়ান্ত করে।
প্রায় ১২ কোটি ভোটারের বিপরীতে এবার ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ৩৮০টি এবং ভোট কক্ষের সংখ্যা দাঁড়াবে লাখ ৬১ হাজার ৬৬৮টি।