বছরে চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে ঢুকছে ৭৩ হাজার কোটি টাকার সোনা

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) জানিয়েছে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার সোনা অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে আসছে। এছাড়া সোনা চোরাচালান ও অর্থপাচার বন্ধে একসঙ্গে কাজ করার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাজুস।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকে সোনা চোরাচালান প্রতিরোধে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও বাজুসের যৌথ কার্যক্রম নেয়ার বিষয়ে আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এসময় বাজুসের সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, বাজুসের কোনো সদস্য সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সোনা চোরাচালান কমিয়ে আনতে সচেতনতা তৈরি করাই আলোচনার মূল লক্ষ্য বলেও জানানো হয়।
বাজুস সভাপতি বলেন, অর্থপাচার ও ডলার সংকটের নেপথ্যে রয়েছে সোনা চোরাচালান। অনেকে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন।আইন থাকলেও যথাযথ প্রয়োগ নেই। আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে সোনা চোরাকারবারিরা খালাস পাচ্ছেন। সোনা চোরাচালান বন্ধে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে জামিন অযোগ্য মামলা দিতে হবে।
সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে নীতি নির্ধারণী সংস্থা ‘এশিয়া/প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানিলন্ডারিং (এপিজি)’ কর্তৃক ২০১৫-১৬ মেয়াদে পরিচালিত তৃতীয় পর্বের মিউচুয়াল ইভালুয়েশন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি ওই সময়ে বাজুস কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং এ রেটিং অক্ষুণ্ন রাখতে বাজুস ও বিএফআইইউ এর মধ্যে সহযোগিতা-সমন্বয় আরও সুদৃঢ়করণ এবং সোনা চোরাচালান প্রতিরোধে যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করার আহ্বান জানান।
জব্দ করা সোনা নিলামে বিক্রির বিষয়ে বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, অবৈধভাবে আসা বা জব্দ করা সোনা নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ দাবি আমাদের অনেক আগে থেকেই ছিল। আমরা চাই ডলার সংকটের এ সময়ের জব্দ করা বার নিলামে বিক্রি করা হোক। এসব ‘র মেটেরিয়াল’ আমাদের দেশের জন্য ভালো হবে। কারণ আমাদের এখানে বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারির মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে।
বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়নের মতো আন্তর্জাতিক সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে বিএফআইইউ এর ভূমিকা অবহিত করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা মূল্যবান ধাতু বা পাথরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বনিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এর দায়-দায়িত্ব ও সোনা চোরাচালান প্রতিরোধে যৌথ কার্যক্রম গ্রহণে চলমান ও ধারাবাহিক অংশগ্রহণ বিষয়ে আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বিএফআইইউ ও বাজুসের সাথে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাজুসের প্রেসিডেন্ট জনাব সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সভায় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া সভায় বিএফআইইউ এর উপপ্রধান ও পরিচালক মহোদয়সহ ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন।
সভায় মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন সংক্রান্ত আর্থিক অপরাধ মোকাবিলায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এবং এতদসংক্রান্ত বিধিমালার আওতায় সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার দায়-দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এ মূল্যবান ধাতু ও পাথর তথা সোনা চোরাচালানকে সম্পৃক্ত অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণকারী এর সুপারিশ এবং সোনা চোরাচালানে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের ঝুঁকি বিবেচনায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এ মূল্যবান ধাতু বা পাথরের ব্যবসায়ীকে বিএফআইইউয়ের রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়— মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-২০১৯ এ রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে মূল্যবান ধাতু ও পাথরের ব্যবসায়ীদের দায়-দায়িত্বের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নিদের্শনার পাশাপাশি তাদের সংগঠন বাজুসের ওপর বেশকিছু দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— বিএফআইইউয়ের সহায়তায় এর সদস্যদের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন সংক্রান্ত ঝুঁকি নিরূপণ, তাদের বিএফআইইউয়ের নির্দেশনা প্রেরণ, সন্দেহজনক লেনদেন বা সন্দেহজনক কার্যক্রম চিহ্নিতকরণে সহায়ক গাইডলাইন ও ফিডব্যাক দেওয়া, সদস্যদের সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও অন্যান্য কর্মসূচি আয়োজন করাসহ এতদ্সংক্রান্ত আইন, বিধিমালা ও বিএফআইইউয়ের নির্দেশনা পরিপালনে বিএফআইইউকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া ইত্যাদি।
সভায় জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসীকার্যে অর্থায়নের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত না হয় সে লক্ষ্যে সব জুয়েলারি ব্যবসায়ী অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।