বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় রেলপথ যোগাযোগ; ফের আন্দোলনে রানিং স্টাফরা
মাজহারুল ইসলাম রানা, চট্টগ্রাম নগর প্রতিনিধি: রেলওয়ের মাইলেজ ইস্যুতে আবারো আন্দোলনে নামছেন রানিং স্টাফরা। মাইলেজ সুবিধা বহাল রাখার বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনের পর ঘোষণা আসার এক বছর পার হয়ে গেলেও কোন প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। ফলে পেনশন নিয়ে জটিলতায় পড়ছেন অবসরে যাওয়া কর্মীরা।
প্রজ্ঞাপন জারি না হলে আগামী ২৭ আগস্ট থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন ট্রেন চালক, গার্ডসহ সরাসরি ট্রেন পরিচালনার কাজে নিয়োজিত রানিং স্টাফরা। ফলে রেল যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
১৯ আগষ্ট সকাল ১১ টায় শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির উদ্যোগে আগামীকাল ২০ আগষ্ট রবিবার বিকাল ৪ টার চট্টগ্রাম স্টেশনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এবং আগামী ২২ আগষ্ট মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক/পূর্ব বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
আয়োজিত সভায় রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম বিভাগীয় আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, "এক বছর আগে প্রজ্ঞাপন জারির কথা ছিল। তা এখনো করা হয়নি। এজন্য অনেকের পেনশন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। আমার আগের নিয়মে ভাতা পাচ্ছি। কিন্তু নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মানে এখানে ধোঁয়াশা আছে। তাই আমাদের দাবি প্রজ্ঞাপন জারি করা হোক।
এর আগে গত ২৩-২৯ জুলাই পর্যন্ত নির্ধারিত ৮ ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন থেকে বিরত ছিলেন রানিং স্টাফরা। এতে পণ্যবাহী ও লোকাল ট্রেন চলাচলে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুর সফরের সময় যেন ট্রেন চলাচলে ব্যাঘাত না ঘটে, এজন্য তারা কর্মসূচি বাতিল করেছিল।
২০২১ সালের নভেম্বরের নতুন ঘোষণার পর থেকে আন্দোলনে নামেন রানিং স্টাফরা। ২০২২ সালে জানুয়ারিতে কয়েক দফা আন্দোলন করেন, অতিরিক্ত ডিউটি বন্ধ করে দেন। তখনও আশ্বাস দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আগের নিয়মে বেতন-ভাতার বিষয়টি আদায় করেন তারা। তবে ১০ এপ্রিল পেনশন ও আনুতোষিক হিসাবে মাইলেজ সুবিধা যুক্ত করার বিষয়ে অসম্মতি জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়। কর্মবিরতি করেন রানিং স্টাফরা। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ১৩ এপ্রিল রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলামসহ দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়া নতুন প্রজ্ঞাপন জারির ঘোষণা দেওয়া হয়।
তবে রেলওয়ের ২০২১ সালের ৩ নভেম্বরের প্রজ্ঞাপনটি এখনো বাতিল করা হয়নি। এক বছর পার হলেও আগের নিয়ম পুনর্বহালের বিষয়েও কোন ঘোষণা আসেনি। আগের নিয়মে বেতন-ভাতা পেলেও অবসরপ্রাপ্ত রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক নির্ধারণ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো. নজরুল ইসলাম গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অর্থ) বরাবর এক চিঠিতে জটিলতার বিষয়টি উল্লেখ করেন। ওই চিঠির তথ্যমতে, ২০২১ সালের নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে রানিং স্টাফদের মাইলেজ ভাতা সীমিত করা হয়। তবে অবসরে যাওয়া কর্মীরা মূল বেতনের সঙ্গে ৭৫ শতাংশ মাইলেজ ভাতা পাবেন না। এটিকে অনুসরণ করে রানিং স্টাফদের পেনশন প্রাপ্যতা নির্ধারণের বিষয়ে ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ নির্দেশনা জারি করে। এরপর আন্দোলনের মুখে ১৩ এপ্রিল তা আবার প্রত্যাহার করা হয়। এরপর নতুন প্রজ্ঞাপন জারির কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এজন্য পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২০ জন রানিং স্টাফের অবসরের পেনশন নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
রেলের রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের নেতাদের অভিযোগ, সুযোগ-সুবিধা রহিত অনেকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ নিয়োগপত্রে উল্লেখ ছিল, পূর্বের নিয়মানুয়ী তারা সকল সযোগ-সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ অতিরিক্ত ডিউটি করানোর বিপরীতে তারা মাইলেজ সুবিধা পাবেন। কিন্তু চাকরিতে যোগাদানের সময় স্বাক্ষরিত অফার লেটারে মাইলেজ সুবিধা রহিত করার শর্তজুড়ে দেয়া হয়। এতে দৈনিক ৮ ঘণ্টার পর মাইলেজ ভাতা বিবেচনা করা হবে উল্লেখ করা হয়। অথচ রেলের বর্তমান বিভিন্ন রুটের গন্তব্য ৮ ঘণ্টায় সমাপ্ত হয়। ফলে সহকারী লোকোমাস্টাররা রেলের দীর্ঘ ১৬০ বছরের প্রচলিত মাইলেজ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।
সভায় বক্তারা বলেন,আগামী ২৭ আগস্ট ২০২৩ এর মধ্যে রানিং স্টাফদের ১৬০ বছরের অধিকার যা তারা রেলওয়ে কোড ও বিধি বিধান অনুযায়ী ব্রিটিশ আমল থেকে পেয়ে আসছেন তা অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পুনর্বহাল করে সুস্পষ্ট আদেশ জারি করা না হলে আগামী ২৮ আগস্ট ২০২৩ থেকে সর্বস্তরের রানিং স্টাফগণ সারা দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করবেন।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি (রেজিঃ বি-১৮৭৮) এর সাধারণ সম্পাদক মো: মজিবুর রহমান।
রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির আহবায়ক মজিবুর রহমান ভুইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহেদ আলী, আবদুল বারী, ইমদাদুল হক আহমেদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল আলম, শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, গার্ড কাউন্সিল এর কেন্দ্রীয় ও শাখা নেতৃবৃন্দ, টিটিইজ এসোসিয়েশন এর নেতৃবৃন্দ সহ সর্বস্তরের রানিং স্টাফগণ।